ঢাকা শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

বায়ুদূষণে ক্ষতি সোয়া লাখ কোটি টাকা


প্রকাশিত:
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:৫৭

আপডেট:
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১১:১০

ফাইল ছবি

পরিবেশ টিভি: বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, যা দেশের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রায় ৫ শতাংশ। গতকাল বুধবার পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্রিন পিসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। বায়ুদূষণজনিত রোগে দেশে শিশুর অকালমৃত্যুর একটি হিসাবও দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৯৬ হাজার শিশুর অকালমৃত্যু হয়েছে।

বিষাক্ত বায়ু: জীবাশ্ম জ্বালানির খেসারত শীর্ষক এই প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো বায়ুদূষণের আর্থিক ক্ষতির আনুমানিক হিসাব উঠে এসেছে। দূষণের কারণে দিনে বিশ্বের মোট আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। আর বাংলাদেশে বছরে ক্ষতি ১ লাখ ১৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (১ মার্কিন ডলারে ৮৪ টাকা হিসাবে)। ২০১৮ সালে বিশ্বে ৪০ লাখ শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিনের আগেই মারা গেছে। বছরে ৪০ লাখ মানুষ অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসছে চিকিৎসা নিতে।

গ্রিন পিসের প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ঢাকার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, এই প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের আর্থিক ক্ষতি বলতে চিকিৎসা খরচ, কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া, কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো আমলে নেওয়া হয়েছে।

গ্রিন পিসের প্রতিবেদনে বিশ্বের বায়ুদূষণের প্রধান কারণ বা উৎস হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানিকে দায়ী করা হয়েছে। মূলত বিদ্যুৎ ও অন্যান্য শক্তি উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে কয়লা ও তেল ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব জ্বালানি যানবাহন, শিল্পকারখানাসহ অন্যান্য কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব জ্বালানি থেকে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম–২.৫ ও পিএম–১০ বের হচ্ছে। একই সঙ্গে ভারী বস্তুকণাও বাতাসে গিয়ে মিশছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহমেদ বলেন, ‘বায়ুদূষণের উৎসগুলো আমরা একে একে বন্ধ করছি। একসঙ্গে সব ইটভাটা ও যানবাহন বন্ধ করতে গেলে তা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে ধীরে ধীরে বায়ুর মান আরও ভালো হচ্ছে।’

গ্রিন পিস যখন বাংলাদেশ ও বিশ্বের বায়ুদূষণের প্রভাব নিয়ে প্রতিবেদনটি দিয়েছে, তখনো ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ শহরের বায়ুর মান বেশ খারাপ অবস্থায় আছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী গত মঙ্গলবার ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, ময়মনসিংহ ও রংপুর শহরের বায়ুর মান ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। আর চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও কুমিল্লার বাতাস অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ছিল।

বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়ালের হিসাবে, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ছিল; যা দূষণের দিক থেকে প্রধান শহরগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, ‘বায়ুদূষণ রোধে সরকারের অনেক উদ্যোগের কথা আমরা শুনলেও তার কোনো সঠিক ও কার্যকর বাস্তবায়ন দেখছি না। হ্যাঁ, অনেক ইটভাটা বন্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি রাজধানীসহ সারা দেশেই চলছে। এসব গাড়ি চালানোর সঙ্গে আমাদের নীতিনির্ধারকদের অনেকে যুক্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে তা বন্ধ হচ্ছে না। সরকারের উচিত, এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে দূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।’

 

সূত্র: প্রথম আলো


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top