ঢাকা রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়


প্রকাশিত:
৫ মে ২০২৪ ২১:০১

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ০৩:৪৮

এক মাস ধরে চলা তীব্র দাবদাহের জন্য দায়ী অপরিকলি্পত নগরায়ন ও নির্বিচারে গাছপালা-বন উজাড় করা। এসবের কুফল এখন ভোগ করতে শুরু করেছে দেশের মানুষ। যেখানে একটি দেশের পরিবেশ-প্রকৃতি ঠিক রাখতে অন্তত ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার, সেখানে বাংলাদেশে মোট আয়তনের ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ এলাকায় বনভূমি রয়েছে বলে জানিয়েছেন খোদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।

আর ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট পরিচালিত প্ল্যাটফর্ম গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমেছে প্রায় ৬ লাখ ৭ হাজার ৬২০ একর। এই সময়ে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ আগের তুলনায় ১৩ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে ২০১৭ সালে; প্রায় ৭০ হাজার একর।

গবেষণার তথ্যে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৪৯ লাখ সাড়ে ৯৬ হাজার একর (২০ লাখ ২২ হাজার হেক্টর) প্রাকৃতিক বনভূমি ছিল, যা মোট ভূমির ১৬ শতাংশ। প্রতিবছরই সেই বনভূমি কমছে। শুধু ২০২৩ সালেই বনভূমি কমেছে প্রায় ৪৪ হাজার একর।

এই বিশাল এলাকার গাছগাছালি ধ্বংস না হলে অন্তত ৭৫ মেগাটন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ ঠেকানো যেত।

ফরেস্ট ওয়াচের গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সময়ে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা সবচেয়ে বেশি কমেছে চট্টগ্রামে; ৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৭০ একর, যা মোট কমে যাওয়া বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার ৯৪ শতাংশ; এরপর যথাক্রমে আছে সিলেট, সেখানে কমেছে ২০ হাজার ৬৭৪ একর, ১৩ হাজার ৯৮০ একর, রংপুরে কমেছে ১ হাজার ১৯০ একর, রাজশাহীতে ৭৯৮ একর, খুলনায় ৫০১ একর, বরিশালে কমেছে প্রায় ২৪৫ একর।

গত ২০ বছরে চট্টগ্রাম অঞ্চল যে পরিমাণ বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা হারিয়েছে, তার ৭৬ শতাংশই বান্দরবান ও রাঙামাটিতে। এই সময়ে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা সবচেয়ে বেশি উজাড় হয়েছে বান্দরবানে- ২ লাখ ৯ হাজার ৭৯২ একর। এছাড়া রাঙামাটিতে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬১০ একর, খাগড়াছড়িতে ৬০ হাজার ৫৪১ একর, চট্টগ্রামে ২৩ হাজার ১০৪ একর ও কক্সবাজারে ২২ হাজার ৭৮৩ একর বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা ধ্বংস হয়েছে।

এই সময়ে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। তালিকায় প্রথম নামটি দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সুরিনাম; যেখানে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমেছে প্রায় ৬ লাখ ২২ হাজার ৪৪০ একর, দ্বিতীয় স্থানে থাকা দেশটি হচ্ছে আফ্রিকার দেশ মালাউই; সেখানে কমেছে ৬ লাখ ১০ হাজার ৯০ একর বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমি।

গবেষণায় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে ২২ হাজার ৪৪৫টি স্থানে বৃক্ষ নিধন হতে পারে বলে সতর্ক করেছে ফরেস্ট ওয়াচ। এসব এলাকায় প্রায় ৬২৯ একর বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা উজাড় হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা সংস্থাটির। শুধু এপ্রিলের ১০ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত ৭ দিনে ৪ হাজার ৫৯৫টি স্থান নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যার ফলে ১৩০ একর বন উজাড় হতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির সহায়তায় কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে এই গবেষণা ও সতর্কতা জারি করেছে গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ।

বাংলাদেশের যেসব স্থানে বৃক্ষ নিধনের বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে চট্টগ্রামে। উজাড় হওয়ার শঙ্কায় থাকা ভূমির ৭২ শতাংশই (৪৫৬ একর) চট্টগ্রামের। বাদবাকি এলাকাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে আছে ঢাকা। ঢাকায় ১২১ একর, সিলেটে ৩৭ একর, রংপুর ও খুলনায় প্রায় ৫ একর করে, রাজশাহীতে ২.৫০ একর এবং বরিশালে প্রায় ২ একর বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা উজাড় হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি

দেশের বন ও বনভূমি দেখভালকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে মোট বনভূমির পরিমাণ ছিল ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ একর। এর মধ্যে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫২ একরই বেদখল হয়ে আছে।

সবচেয়ে বেশি বনভূমি বেদখল হয়েছে কক্সবাজার জেলায়। জেলাটিতে ৫৯ হাজার ৪৭১ হাজার একর বনভূমি বেহাত হয়েছে।

অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবছর আমরা প্রায় ১০ হাজার হেক্টর বন হারাচ্ছি। আবার নতুন করে বাড়ছেও। কিন্তু, কার্বনের দিক থেকে যদি চিন্তা করেন, গেইনের থেকে আমাদের লস বেশি। অর্থাৎ, নিট লস আছে।

“পার্বত্য চট্টগ্রামে বন বেশি কমছে, আবার গাজীপুরকেন্দ্রিক শালবন কমছে। এগুলো মনুষ্যসৃষ্ট কারণে। আবার যদি সুন্দরবনের দিকে দেখেন, ওখানে বন তেমন কমেনি। যেটুকু কমেছে, সেটা ভাঙনজনিত বা অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে। আমরা এই লস-গেইনকে ২০৩০ সালের মধ্যে একটা নিউট্রাল পজিশনে নিয়ে যেতে চাই।”

বন জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জবরদখলের যে তালিকা, এটা ২০২০ সালে তৈরি করেছিলাম আমরা। এরমধ্যে ২৬ হাজার একর বনভূমি এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। নতুন করে ওইসব এলাকায় বনায়নও করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।”

কেন কমছে বনভূমি?

বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা বা বনভূমি কমে যাবার পেছনে যেমন অপরিকল্পিত নগরায়ণ দায়ী, তেমনি দায় আছে জল, বায়ু ও মাটি দূষণ এবং নদী ভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক কারণ। যে হারে গাছ কমছে, সে হারে লাগানো হচ্ছে না এটিও বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। আবার লাগানো হলেও পর্যাপ্ত পরিচর্যার অভাবে অনেক গাছই মারা যায়।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, নদী ও পরিবেশ বিষয়ক সংগঠক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, “অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ থেকে নগরের সম্প্রসারণ সবকিছুই গাছ উজাড় করছে। এরপরও আমাদের যে পরিমাণ জায়গা খালি আছে, সেসব জায়গায় প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানো যায়।

“তবে, বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি করলে হবে না। আমরা তো শুধু বৃক্ষ রোপণ করি। বরং ‘গাছ লাগাই, গাছ বাঁচাই’ এভাবে করতে হবে। অর্থাৎ শুধু রোপণ করলেই হবে না, বরং পরিচর্যাও দিতে হবে। আরেকটা বিষয় হলো নদীভাঙন। প্রতিবছর নদী-ভাঙনের ফলে আমাদের প্রচুর গাছ-পালা কমে যায়। সেজন্য, আমাদের নদীগুলোও রক্ষা করতে হবে।”

বিপদ কেবল শুরু

এবছর সবচেয়ে লম্বা সময়, এক মাস ধরে তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ, যার শুরু ৩১ মার্চ। এর মধ্যে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় এবং মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৪৩ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এর আগে ২০১৪ সালে ৫-৩০ এপ্রিল টানা ২৬ দিন, ২০১৬ সালে ছিল ৬-৩০ এপ্রিল ২৫ দিন। ২০২৩ সালে ১৩ এপ্রিল থেকে ৫ মে ২৩ দিন তাপপ্রবাহ ছিল।”

দাবদাহের এমন পরিস্থিতিতে ‘বিপদের শুরু’ দেখছেন গবেষকরা।

এপ্রিল মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএসের এক গবেষণা সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ঢাকার ২০ শতাংশ স্থানে গাছপালা থাকা দরকার হলেও আছে মাত্র ২ শতাংশে।

তুলনামূলক এক চিত্রে দেখা গেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ শতাংশ এলাকায় গাছপালা ও ২২ শতাংশে জলাভূমি আছে। এ কারণে একই সময় ঢাকার চেয়ে সেখানকার তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম থাকে। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রমনা পার্ক এলাকার তুলনায় ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকায় তাপমাত্রা থাকে ২ ডিগ্রি বেশি।

ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএসের পরিচালক শেখ তাওহীদুল ইসলাম বলেন, “গাছপালা কমে যাওয়ার ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের যে চিত্র, এটি বিপদের কেবল শুরু। আগামী দিনে এটি আরও বাড়বে। ভয়ানক খারাপ অবস্থা হবে। আমরা প্রকৃতিতে হাত দিয়েছি। সেটার ফল ভোগ করতে হবে। এখন তাহলে আমাদের করণীয় কী?

তিনি বলেন, “একটা গাছ বড় হলেই সেটা বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে, এমন মাইন্ডসেট থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। গাছের যে ইকোলজিক্যাল ভ্যালু আছে, সেটা চিন্তা করতে হবে। আমাদের হাতে আসলে এমন কোনো শর্টকার্ট নেই, যাতে রাতারাতি এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে, এটাই বাস্তবতা। এজন্য আমাদের শর্টটার্ম, মিডটার্ম এবং লং টার্ম পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। যেমন মিডটার্মে (৫ বছর সময়) আমরা এয়ার পলিউশনটা কমাতে পারি।”

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) ২০১৭ ও ২০২৪ সালে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার তাপমাত্রার তারতম্যের মূল্যায়ন সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকায় দিন দিন তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে এলাকাভিত্তিক সবচেয়ে বেশি গরম বেড়েছে মহাখালী ও গুলিস্তানে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আওতাধীন এলাকায় ২০১৭ সালে গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৪ সালে সেটি হয়েছে ৩৭ দশমিক ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অপরদিকে, ২০১৭ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৪ সালে এসে বেড়ে হয়েছে ৩৬ দশমিক ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ক্যাপসের চেয়ারম্যান ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, “আমি বারবার বলছি আমাদের কতগুলো কুলিং ফ্যাক্টর আছে, আর কতগুলো ওয়ার্মিং ফ্যাক্টর আছে। আমরা আমাদের কুলিং ফ্যাক্টরগুলোকে নিউট্রাল করে ফেলেছি। গত ২৬ বছরে শুধু ঢাকাতেই গাছপালা কমেছে এক-তৃতীয়াংশ।”

এখন করণীয় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের নতুন করে বৃক্ষরোপণ বাড়াতে হবে। তবে, বড় গাছ কেটে চারা রোপণের যে প্রবণতা, সেটি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। গাছ লাগানোর পাশাপাশি সেটি বড় হওয়া পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিচর্যা করতে হবে। আমাদের জলাধারগুলো উদ্ধার করতে হবে এবং বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে জায়গা কিনে জলাধার বানাতে হবে।

“এরপর হলো নতুন অবকাঠামো। ঢাকায় সম্প্রতি যে নতুন অবকাঠামোগুলো তৈরি হয়েছে এগুলো অনেক বেশি তাপমাত্রা ধারণ করছে। নতুন অবকাঠামো বানালে সেটির তাপ ধারণে কি পরিমাণে বৃক্ষ লাগাতে হবে, সেটিও আগেই নির্ধারণ করা উচিত।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটা নগরীর জন্য গাছপালা এবং জলাশয়ের একটা কুলিং অ্যাফেক্ট আছে। ২০ থেকে ৩০ বছর আগেও ঢাকা এবং চট্টগ্রাম ছিল স্বাস্থ্যকর শহর। এখনকার পরিস্থিতিটা তৈরি হয়েছে একদমই অপরিকল্পিত নগরায়ন।

“২০০০ সালে পরিবেশ আদালত আইন করেও এটা বাস্তবায়ন করা যচ্ছে না। গাছপালা কেটে, জলাশয় ভরাট করে একটা শ্রেণি হয়ত এসিতে স্বস্তিতে আছে। কিন্তু, বিপুল পরিমাণ সাধারণ মানুষকে এই এসি ব্যবহারের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমাদের সাধারণ উন্নয়ন মনস্তত্ত্বের মধ্যেও আমরা সবুজ এবং পানি রাখতে পারি নাই। আমাদের পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে হবে। করে যেটা বেটার সেটাই করতে হবে। বিশেষ করে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা নতুন করে প্রস্তুত করতে হবে।”

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএওর বরাত দিয়ে ফরেস্ট ওয়াচ বলছে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমে যাওয়ার হার ছিল শূন্যের কোঠায়।

সবচেয়ে বেশি বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ২০০০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নতুন প্রাকৃতিক বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামে ২ লাখ ৬৪ হাজার ২৯০ একর, ঢাকায় ১ লাখ ৬৩ হাজার ২৬৭ একর বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা বেড়েছে।

এছাড়া, রাজশাহীতে প্রায় ৮৪ হাজার একর, রংপুরে ৭৫ হাজার ৩৩৫ একর, বরিশালে ৬৯ হাজার ৪০৭ একর, খুলনায় ৬৭ হাজার ৯২৫ একর, সিলেটে ৬১ হাজার ৯৯৭ একর বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা বেড়েছে। লাগানো গাছের হিসাব বাদ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে নতুন জন্মানো বৃক্ষ হিসাব করে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।

এই সময়ে বৈশ্বিক বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা বাড়ার ০.২৪ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। এই তালিকায় প্রথম অবস্থানে আছে রাশিয়া। তারা প্রায় ৩৭ দশমিক ২ মিলিয়ন হেক্টর বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা বাড়িয়েছে। এই সময়ে বাংলাদেশে স্থায়ী বনভূমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজার একরে। এর মধ্যে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা আছে ৭ লাখ ৮৫ হাজার ৪৬০ একর, ২ লাখ ৮৪ হাজার ৪০ একর হারিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫ লাখ ৬ হাজার ৭০০ একর বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমি।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top