ঢাকা বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১


অতি নিম্নমানের বর্জ্যও পুনর্ব্যবহার করতে চান তারা


প্রকাশিত:
১৩ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৫২

আপডেট:
৮ মে ২০২৪ ০৮:৫২


বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বড় একটি ত্রুটি হচ্ছে, এর মাধ্যমে মানুষের তৈরি করা বর্জ্যের কেবল ছোট একটি অংশই পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে আবার ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু যেসব বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা হয় না, সেগুলোও ভাগাড়ে গিয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তামিলনাড়ুর এক উদ্যোগ সেই পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে। নজর না দেওয়া বর্জ্যেও যে অনেক কিছুই পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব, সেটিই হাতেনাতে দেখিয়ে দিচ্ছে তারা।

তামিলনাড়ুর একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান তাদের কাজের মূল লক্ষ্য হিসাবে বেছে নিয়েছে নিম্নমানের বর্জ্যকে। এসব বর্জ্য সাধারণত বেশিরভাগই ভাগাড়ে স্থান পায়। এ উদ্যোগে বর্জ্য উপাদানগুলোকে শুরুতেই আলাদা করা হয়। তারপর সেগুলোকে নতুন পণ্যে রূপান্তর করা হয়, বা মেরামত করে বিক্রি করা হয়।

তামিলনাড়ুর অন্যতম বড় একটি ভাগাড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫,৬০০ টন বর্জ্য ফেলা হয়। এর ওজন ১,১০০ হাতির সমান। সম্প্রতি চেন্নাইভিত্তিক একটি সামাজিক উদ্যোগ “ওয়েস্টেড ৩৬০ সলিউশনস” এই পরিবেশগত সংকটের সমাধানে এগিয়ে এসেছে। যেসব বর্জ্যকে সাধারণত উপেক্ষা করা হয়, তারা সেগুলো নিয়েই কাজ করে।

“ওয়েস্টেড ৩৬০ সলিউশনস”-এর প্রতিষ্ঠাতা আন আনরা বলেন, “সবাই জানে প্লাস্টিক-গ্লাস এবং কাগজ এগুলো পুনর্ব্যবহার করা যায়। কিন্তু আমি যেসব বর্জ্য নিয়ে কাজ করছি, সেগুলো নিয়ে কেউ কথাও বলে না, গবেষণাও করে না। তারা সেগুলো সংগ্রহও করতে চায় না।”

এই প্রতিষ্ঠান যেসব পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে, তার মধ্যে রয়েছে টেট্রাপ্যাক (পানীয়র শক্ত প্যাকেট), ব্যবহৃত কাপড়, সুটকেস এবং প্লাস্টিক। এসব উপাদান সহজে পচে না এবং কয়েক শতক ধরে পরিবেশে থেকে যায়। কিন্তু এগুলোও মূল্যবান হতে পারে।

“ওয়েস্টেড ৩৬০ সলিউশনস” এসব পণ্যকে পুনর্ব্যবহার উপযোগী করে ব্যবসা এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটা সুযোগ হিসেবে তুলে ধরতে চায়।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক আয়েশা আজমল বলেন, “এটি আমাদের বর্জ্য আলাদা করার স্থান। এখানে এসে মানুষ তাদের বর্জ্য ফেলে যায়। এখানে দেখতে পাচ্ছেন কসমেটিকের স্যাম্পলের বোতল। এর নিচের অংশ কাঁচ এবং সেটা পুনর্ব্যবহারযোগ্য। বোতলের ক্যাপ প্লাস্টিকের, সেটিও পুনর্ব্যবহারযোগ্য। আমরা এগুলো আলাদা করি। শুরুতে আমরা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বর্জ্য আলাদা করি।”

১০ জন কর্মী শহরে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করেন। প্রতিষ্ঠিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনেক ত্রুটির কথা তুলে ধরেন আন আনরা। তিনি বলেন, “আমি নিজের বাসাতেও আলাদা করে বর্জ্য ফেলতাম। এক মাস পর আমি স্থানীয় বর্জ্য বিক্রেতাকে ডাকি। তিনি এসে আমার আলাদা করা বর্জ্যকে আবার আলাদা করেন। একটা বড় স্তূপে, আরেকটা ছোট স্তূপে। আমি কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, তিনি কেবল ছোট স্তূপের বর্জ্য পুনর্ব্যবহার উপযোগী করতে পারবেন। বড় স্তূপের বর্জ্য তিনি ফেলে দিবেন। তখনও আমি ভাবলাম, আমাকে এই অবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। এভাবেই আমার যাত্রা শুরু হয়।”

শুরুটা অবশ্য সহজ ছিল না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এমন এক ব্যবসা, যেটির ব্যাপারে অনেক নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। পাশাপাশি ভোক্তাদের মানসিকতাতেও পরিবর্তন প্রয়োজন। আনা আনরা বলেন, “সব বর্জ্যই বর্জ্য নয়। এটি আসলে সম্পদ বা কাঁচামাল। টেকসই হওয়াটা নতুন কোনো ধারণা নয়। আমাদের পূর্বপুরুষেরা, এমনকি ৯০ এর দশক পর্যন্ত সবাই তাদের ভাই-বোনের জিনিস ব্যবহার করতো। কেনাকাটাও হতো স্থানীয় পর্যায়ে। ফলে টেকসই জীবনের জন্য আমাদের পেছনে ফিরতে হবে।”

ওয়েস্টেড ৩৬০ সলিউশনসের নিজস্ব দোকানও রয়েছে। আন আনরা চান মানুষ নিজেদের মানসিকতা পরিবর্তন করে এসব জিনিস কিনুক। নতুন পণ্য একেবারেই প্রয়োজনীয় হলে সেগুলো হওয়া উচিত উচ্চমানের এবং স্থায়ীত্বশীল। কারণ এতেই কমানো সম্ভব বর্জ্যের পরিমাণ।


সূত্র : ডয়চে ভেলে


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top