মারাত্মক খরার কবলে ইউরোপ
কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপের সবচেয়ে মারাত্মক খরা মহাদেশ জুড়ে বাড়িঘর, কারখানা, কৃষক এবং মালামাল পরিবহনের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই পরিস্হিতি ইউরোপের অর্থনীতিকে মারাত্মক ভঙ্গুর পরিস্হিতির দিকে নিয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে পানির ঘাটতি ‘স্বাভাবিক এক পরিস্হিতি’ হয়ে উঠবে। সবাইকে এই পরিস্হিতির জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
গবেষকরা বলছেন, ইউরোপের ৪৫ শতাংশ অঞ্চল জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকেই খরার সতর্কতার অধীনে ছিল। ১৫ শতাংশ অঞ্চলে ইতিমধ্যেই রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ইউরোপীয় কমিশন একাধিক অঞ্চলে ‘সংকটজনক’ পরিস্হিতি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। জানা গেছে, ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে বারবার তাপপ্রবাহের কারণে পরিস্হিতির অবনতি হয়েছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৯৫৮ সালে রেকর্ড উষ্ণতার পর এমন খরা এই প্রথম প্রত্যক্ষ করল দেশবাসী। ১০০ টিরও বেশি ফরাসি পৌরসভায় লাইনে পানীয় জলের সরবরাহ নেই। ট্রাক দ্বারা বিভিন্ন এলাকায় সীমিত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, আমাদের এই ধরনের পরিস্হিতিতে অভ্যস্ত হতে হবে। এটি এখন একটি বাধ্যবাধকতা বলা চলে।
দেশটিতে ভূপৃষ্ঠের মাটির আর্দ্রতা এখন পর্যন্ত রেকর্ড সর্বনিম্ন। জুলাইয়ে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৫ শতাংশ কম হয়েছে।
জার্মানিতে পানির মজুত সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। পানির জন্য ৪০ শতাংশ বর্ধিত খরচ করতে হচ্ছে তাদের। সেখানে বাষ্পীভবন সপ্তাহে দেড় শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে। সরকারের মতে, এটি গত ৬০ সালের মধ্যে সবচেয়ে শুষ্ক পরিস্হিতি। দেশটি গত তিন মাস ধরে প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাতের অর্ধেকেরও কম পেয়েছে।
স্পেনেও একই পরিস্হিতি বিরাজ করছে। ইউরোপিয়ান ফরেস্ট ফায়ার ইনফরমেশন সিস্টেম অনুসারে, দেশটিতে ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগ অঞ্চলে ব্যক্তিগতভাবে পানি সংগ্রহের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। সরকারিভাবে যা যোগান দেওয়া হচ্ছে তা জনগণের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ফলে ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়েছে লোকজন। কৃষকরা সেচের পানি না পাওয়ায় ফসল মারা যাচ্ছে। কিংবা ফলানো সম্ভব হচ্ছে না।
আর্জেন্টিনায় মহামারি পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুজ্জীবন করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু অনেক শহরে প্রয়োজনের ১০ শতাংশ পানিও সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বিভিন্ন কোম্পানির উত্পাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যদি শীঘ্রই বৃষ্টিপাত না হয় এবং কোনো পূর্বাভাস না থাকে তবে আরো বড় ধরনের খারাপ পরিস্হিতির জন্য তৈরি থাকতে হবে তাদের।
এই বছরটি ইতালির আবহাওয়াও রেকর্ড উষ্ণ হয়ে উঠবে। ইতালীয় আবহাওয়া সমিতির সভাপতি লুকা মেরকালি এই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, গত ২৩০ বছরের কোনো অনুরূপ তথ্যের সঙ্গে আমরা এই বছর যে খরা এবং তাপ অনুভব করছি তার সঙ্গে তুলনা হয় না। তীব্র খরায় ভুগছে যুক্তরাজ্যও। সেখানেও কৃষিকাজ মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে, সুইজারল্যান্ডে খরার কারণে দুগ্ধ শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফ্রাইবার্গ, জুরা এবং নিউচ্যাটেলের কর্তৃপক্ষকে উপত্যকার তৃণভূমি খুলতে হয়েছে যা সাধারণত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গোচারণে ব্যবহূত হয় না। কারণ পাহাড়ে ওপরে চারণভূমি খুব শুষ্ক থাকে।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: