ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


ব্রিটেনের পেনজান্স ‘প্লাস্টিক মুক্ত' শহর


প্রকাশিত:
১৯ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০৫

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৬:১০

ছবি: সংগ্রহীত

পরিবেশ টিভি: ব্রিটেনের কর্নওয়ালের রোম্যান্টিক উপকূল: ঠিক সেখানেই ঝড়বাতাসে বয়ে আনছে টন টন আবর্জনা, বিশেষ করে প্লাস্টিক আবর্জনা৷ তাই ছোট্ট শহর পেনসান্সের অধিবাসী ও কর্মকর্তা মিলে নেমেছেন পেনজান্সকে প্লাস্টিক মুক্ত করতে।

যেন স্বপ্নে দেখা কোনো মনোমুগ্ধকর এক অজানা দেশ৷ ব্রিটেনের পশ্চিমতম প্রান্তে অবস্থিত কর্নওয়ালের খাড়াই উপকূল: সেটাই তার আকর্ষণ – আবার সেটাই তার বিপদ সৃষ্টি করেছে৷ সাগরের স্রোত আর ঝড়বাতাসে এখানে যতো আবর্জনা ভেসে আসে, তা বোধহয় ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের অন্য কোনো জায়গায় ঘটে না৷ পরিবেশ সংরক্ষণকারী অ্যাক্টিভিস্ট রেচেল ইয়েট্স আজ একটি প্লাস্টিকের বালতি হাতে না নিয়ে পেনজান্সের সৈকতে যান না৷ ছোটবেলায় তিনি এই সৈকতে খেলা করেছেন৷ ৪৩ বছরের রেচেল আজ দেখছেন, বেলাভূমিতে আবর্জনার পরিমাণ প্রতিবছর কিভাবে বেড়ে চলেছে৷

রেচেল বলেন, ‘‘দেখে আমার রাগ হয়, কেননা আমাদের সমাজ যে গত কয়েক বছর ধরে ভুল পথে চলেছে, এটা তারও একটা লক্ষণ – আমরা যেভাবে পরস্পরের সঙ্গে ব্যবহার করি, আমরা যেভাবে জিনিসপত্র কেনাকাটা করি, আমরা যেভাবে বাঁচি৷'' 

রেচেল তাই কোমর বেঁধে প্লাস্টিক আবর্জনার বিরুদ্ধে, মানুষের উদাসীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমেছেন৷ তিনি তাঁর জন্মের শহর পেনজান্সকে জাগিয়ে তুলেছেন, দোকানবাজারে একবারের মতো ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দূর করার ডাক দিয়েছেন৷ আশ্চর্য এই যে, দোকানিরা যে যার নিজের মতো করে সেই ডাকে সাড়া দিয়েছেন: প্লাস্টিকের স্ট্র-এর বদলে কাগজের স্ট্র; প্লাস্টিকের কাঁটাচামচের বদলে কাঠের কাঁটাচামচ; প্লাস্টিকের গ্লাসের বদলে আঁস্তাকুড়ে পচানো যায়, এমন পদার্থে তৈরি গ্লাস৷ বাস্তবিক একটা আন্দোলন শুরু হয়েছে, এখানকার মানুষ যাকে বলেন প্রতিরোধ৷ ৩০টি বিপণী এখনও পর্যন্ত শামিল হয়েছে – তাদের দোকানের কাচে ঝুলছে ‘প্লাস্টিক বর্জিত' সার্টিফিকেট৷ রেচেল একটির পর একটি বিপণী পরিদর্শন করে এই সার্টিফিকেট বিলি করে থাকেন৷ এই ওয়াইনের দোকানটিও শামিল হতে চায়৷ তবে সার্টিফিকেট পাবার একটি চেকলিস্ট আছে; আর সেই চেকলিস্টে আছে বিভিন্ন শর্ত৷ 

‘‘হ্যাঁ, আমরা আর প্লাস্টিকের স্ট্র ব্যবহার করি না৷ আর আমরা কোনো প্লাস্টিকের বোতলও রাখি না – নাকি রাখি? না, সব প্লাস্টিকের বোতল শেষ হয়ে গিয়েছে বলে আমার ধারণা৷''

কাজেই ওয়াইনের দোকানটি এবার নিজেদের ‘প্লাস্টিক বর্জিত' ঘোষণা করতে পারে৷ পরিবেশ রক্ষার নামে বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোও ভালো নয়৷ রেচেল বললেন, ‘‘এর মানে এই নয় যে, দোকানে কোনো রকমের প্লাস্টিক থাকবে না৷ এর মানে হলa এই যে, এই সব দোকানে ডিসপোজেবল বা সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক থাকবে না৷ কেননা বাস্তব এই যে, আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে কিছু কিছু প্লাস্টিকের জিনিস অতো সহজে বাদ দেওয়া সম্ভব হবে না৷''

 বিশেষ করে বড় বড় চেনস্টোরগুলি এযাবৎ পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায়নি ও আগের মতোই নিশ্চিন্ত মনে প্লাস্টিকের ব্যাগ বিলি করে চলেছে৷ পেনজান্সের সিটি কাউন্সিলর যে বিষয়ে আদৌ সন্তুষ্ট নন৷ তাঁর ছোট্ট শহরটি যে ব্রিটেনে আবর্জনা কমানোর জন্য লড়ছে, এজন্য তিনি গর্বিত৷ আবার মিডিয়ায় সে খবর বেরোচ্ছে, কাজেই পর্যটন শিল্পের পক্ষেও তা ভালো বৈ খারাপ নয়৷

কর্মকর্তারাও সুবিধেটা বুঝেছেন

পেনজান্স সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর সাইমন রিড বললেন, ‘‘পর্যটকরা যখন সৈকত বরাবর হাঁটতে বেরোন, তখন তারা বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক দেখেন, বিশেষ করে শীতকালীন ঝড়ের মরশুমে৷ কিন্তু জার্মানি ও হল্যান্ড থেকে অনেক পর্যটক এখানে আসেন: তারা প্রত্যাশা করেন যে, আমাদের সৈকত আবর্জনামুক্ত হবে৷''

সিটি কাউন্সিলের উদ্যমে পেনজান্স এখন সরকারিভাবে ‘ব্রিটেনের প্রথম প্লাস্টিক বর্জিত শহর' ঘোষিত হয়েছে৷ খেতাবটি আবার সার্ফিং অনুরাগীদের এক সমিতির উদ্যোগে সৃষ্ট৷ কর্নওয়ালের সার্ফাররা বহুদিন ধরে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সক্রিয়৷ বহুদিন কেউ তাদের অনুযোগ-অভিযোগে কান দেয়নি৷ কিন্তু এখন হাওয়া বদলাচ্ছে৷ বলতে কি, সমিতির সার্ফারদের কাছে উপকূলের ১৫০টি শহর ও জনপদের আবেদনপত্র জমা পড়েছে: তারা সবাই ‘প্লাস্টিক বর্জিত' সার্টিফিকেট পেতে চায়৷ কাজেই সার্ফিং অনুরাগী ডেভিড ও তাঁর সতীর্থদের আজ সার্ফিং করারই সময় জোটে না!

সার্ফার্স  এগেনস্ট সিউয়েজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড স্মিথ বললেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, আজ আমরা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছি, যেখানে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আমাদের অবশ্যই কিছু একটা করতে হবে৷ এবার আমাদের সরকারকেও রাজি করাতে হবে, যাতে তারা আরো কড়া আইন করেন, যেমন প্লাস্টিকের বোতলের ওপর ডিপোজিট চালু করেন, যা অনেকদিন আগেই হওয়া উচিত ছিল এবং যা সকলেই চায়৷'' এযাবৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিমালা ব্রিটেনে প্রযোজ্য ছিল, কাজেই অন্তত কিছুটা পরিবেশ সুরক্ষার গ্যারান্টি ছিল৷ আশার কথা, ব্রিটিশ সরকার ব্রেক্সিটের পর পরিবেশ সুরক্ষার মান উন্নত করার অভিপ্রায় ঘোষণা করেছে৷ রেচেল অবশ্য রাজনীতিকদের কথায় বিশ্বাস না করে, পরের প্রজন্মের ওপর বিশ্বাস রাখেন৷ কাজেই এর পর তিনি যাচ্ছেন একটি স্কুলে৷ সেখানে রেচেলকে বলতে শোনা গেল, ‘‘তোমাদের স্কুলের ক্যান্টিনে যেন আর কোনো ডিসপোজেবল প্লাস্টিক ব্যবহার করা না হয়, তোমরা তার ব্যবস্থা করতে পারো৷ এই মেয়েরা তোমাদের সেই উদ্যোগে সাহায্য করবে৷''

স্কুলের ছাত্রীদের মধ্যে থেকে আটজন ‘পরিবেশ দূত' বেছে নেওয়া হয়েছে, যেমন আইডা মিডলমিস-ফ্রস্ট৷ আইডা বলল, ‘‘আমার আসল সমস্যা হল আমার বাবা-মা৷ আমি ওঁদের বার বার বলি, প্লাস্টিকের বোতল কিনো না৷ লোকজনের ‘মাইন্ডসেট' বদলানো দরকার৷''

এভাবেই কর্নওয়ালের উপকূলে ছোট্ট শহর পেনজান্সে ব্রিটেনের প্রথম প্লাস্টিক বর্জিত স্কুল জন্ম নিতে চলেছে৷

সূত্র: ডয়েচেভেলে




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top