গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের পাখিরা রঙিন হয় যে কারণে

পাখির রং কীভাবে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে তা জানতে এ গবেষণায় ৯ হাজার চারশ ৯টি প্রজাতির পাখির ডেটাবেজ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের পাখিদের পালক রঙিন হয়ে থাকে। কিন্তু এর কারণ কী? সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এর উত্তর খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
কোথায় বা কোন অঞ্চলে থাকেন এর উপর নির্ভর করে বাড়ির উঠানের আশপাশে আপনি তেমন রঙের পাখি দেখবেন। নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে দূরে থাকলে আপনার দেখা বেশিরভাগ পাখি হবে বেশ সাদামাটা। তবে যত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের কাছাকাছি থাকবেন ততই বেশি রঙিন পাখি দেখতে পাবেন।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের পাখিরা কেন এত উজ্জ্বল রঙের হয় বা কীভাবে এরা এখানে পৌঁছেছে— এই ভাবনা বিজ্ঞানীদের সবসময়ই বিস্মিত করেছে।
পাখিদের রঙিন পালক হওয়ার কারণে উঠে এসেছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন’-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ।
এ গবেষণায় পাখির রং কীভাবে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে তা জানতে ৯ হাজার চারশ ৯টি প্রজাতির পাখির একটি ডেটাবেইজ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকরা দেখেছেন, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের মধ্যে ‘ইরিডেসেন্ট’ অর্থাৎ সাবানের বুদবুদের মতো বর্ণালীর রঙিন পালক ৪১৫ বার দেখা গেছে। এমনকি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের বাইরের পাখিদের মধ্যেও এমন রয়েছে। এমনকি সব ধরনের আধুনিক পাখির পূর্বপুরুষের সম্ভবত এই ইরিডেসেন্ট পালক ছিল।
শিকাগোর ‘ফিল্ড মিউজিয়াম’-এর গবেষণা বিজ্ঞানী ও এ গবেষণার প্রধান লেখক চ্যাড এলিয়াসন বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের ধারণা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে আরও রঙিন প্রজাতি পাখি রয়েছে।
“আমরা খুঁজে বের করতে চেয়েছি এইসব উজ্জ্বল রং কীভাবে সেখানের পাখিদের মধ্যে পৌঁছেছে এবং কীভাবে এগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাখির বংশ বা ‘ফ্যামিলি ট্রি’র মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।”
প্রাণীদের এসব রং পাওয়ার পেছনে দুটি প্রধান কারণ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। একটি রঞ্জক ও অন্যটি পাখির গঠন বা কাঠামো। প্রাণীদের মেলানিন কোষের মতো পাখিরা রঞ্জক তৈরি হয়ে থাকে, যা কালো ও বাদামী রং তৈরি করে।
অন্যদিকে পাখিদের হাড়ের কাঠামোর বিভিন্ন কোষের বিন্যাসের উপর আলো পড়ে তা থেকে ‘ইরিডেসেন্ট’-এর মতো রং তৈরি হয়। আলো কোনও বস্তুর উপর এসে পড়লে সেখানে যেমন রংধনুর ঝিলমিল রং দেখা মেলে বিষয়টি ঠিক তেমনই। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পাখি রঞ্জক ও কাঠামোগত রঙের মিশ্রণ থেকে এমন উজ্জ্বল ও রঙিন পালক পেয়েছে।
এক্ষেত্রে পাখিদের কাঠামোগত রঙের উপর মনোযোগ দিয়েছেন গবেষক এলিয়াসন। এজন্য এলিয়াসন ও তার গবেষণা দলটি নয় হাজার চারশ নয়টি প্রজাতির পাখির ছবি, ভিডিও ও বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন ইলাস্ট্রেশন দেখেন। এসব পাখিদের মধ্যে কোন পাখিদের ইরিডেসেন্ট পালক আছে ও এগুলো কোন জায়গায় পাওয়া গেছে তা ট্র্যাক করেন গবেষকরা।
পাখিদের মধ্যে কীভাবে ইরিডেসেন্ট ছড়িয়ে পড়েছে তা বের করতে কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করেছেন গবেষকরা, যেখানে পাখির ডিএনএর-এর উপর ভিত্তি করে রঙের তথ্য খতিয়ে দেখেছেন।
এ মডেল থেকে ইঙ্গিত মেলে, লাখ লাখ বছর আগে ক্রান্তীয় অঞ্চলে আসে রঙিন পাখিরা। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এরা বিভিন্ন প্রজাতিতে বিবর্তিত হয়েছে। বিষ্ময়করভাবে এ মডেলটি থেকে আরও ধারণা মেলে, সব ধরনের আধুনিক পাখির পূর্বপুরুষদের অর্থাৎ প্রায় আট কোটি বছর আগে বাস করা পাখিদের সম্ভবত ইরিডেসেন্ট বা রঙিন পালক ছিল।
পাখি এক ধরনের ডাইনোসর। পৃথিবীর প্রাচীনতম পাখি ‘আর্কিওপটেরিক্স’ প্রায় ১৪ কোটি বছর আগে দেখা যেত। ‘নিওর্নিথেস’ নামের পাখিরা আট কোটি বছর আগে বিবর্তিত হয়েছে। পাশাপাশি ছয় কোটি ৬০ লাখ বছর আগে গণবিলুপ্তির হাত থেকে বেঁচেও যায় এরা। বর্তমানে সব ধরনের আধুনিক পাখি প্রজাতি ‘নিওর্নিথেস’-এরই অংশ।
এ গবেষণা জীবাশ্মবিজ্ঞানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে উল্লেখ করে এলিয়াসন বলেন, “এখন আমরা সম্ভবত আরও অনেক রঙিন পালকের পাখির জীবাশ্ম খুঁজে পেতে পারি।”
বিষয়: গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পাখি রঙিন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: