ঢাকা রবিবার, ৭ই জুলাই ২০২৪, ২৪শে আষাঢ় ১৪৩১


প্রচন্ড শক্তি নিয়ে বেরিল আঘাত হেনেছে জ্যামাইকায়, নিহত ১০


প্রকাশিত:
৪ জুলাই ২০২৪ ১৭:৪৯

আপডেট:
৭ জুলাই ২০২৪ ১৯:১৫

ক্যারিবীয় অঞ্চলের ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জগুলোতে কয়েকদিন ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর হারিকেন বেরিল বৃষ্টিসহ প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে বুধবার জ্যামাইকায় আছড়ে পড়েছে। এখানে অন্তত একজন নিহত হয়েছেন।

এতে শক্তিশালী এ হারিকেনটির তাণ্ডবে নিহতের সংখ্যা অন্তত ১০ জনে দাঁড়িয়েছে; তবে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

হারিকেনের প্রভাবে ক্যারিবীয় অঞ্চলের দ্বিপপুঞ্জগুলোতে বন্যা ও প্রাণঘাতী ঝড় বয়ে যাওয়ার পর আস্তে আস্তে যোগাযোগ স্বাভাবিক হওয়া শুরু করেছে, ফোন ও ইন্টারনেটের লাইন সচল হচ্ছে। এতে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির চিত্রও পরিষ্কার হচ্ছে।

জ্যামাইকায় বেরিলের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অংশটি দ্বীপটির দক্ষিণ উপকূল দিয়ে স্থলে উঠে সামনে পড়া এলাকাগুলো তছনছ করে দেয়। বন্যাপ্রবণ এই এলাকাটি থেকে বাসিন্দাদের আগেই সরানো শুরু করেছিল জরুরি বিভাগের কর্মীরা।

জ্যামাইকার দক্ষিণাঞ্চলীয় সেন্ট এলিজাবেথ প্যারিশের একটি কৃষিপ্রধান গ্রামে পাহাড়ের ওপর বসবাস করা অ্যামোয় ওয়েলিংটন (৫১) বলেন, “সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমি আমার বাড়িতেই আছি, আতঙ্কিত। এটা ভয়ানক বিপর্যয়।”

জ্যামাইকার দুর্যোগ সংস্থার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক রিচার্ড থম্পসন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, হ্যানোভার এলাকায় ঘরের ওপর গাছ পড়ে এক নারী মারা গেছেন।

বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় এক হাজার জ্যামাইকান আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠেছে বলে জানান তিনি।

জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস বুধবার দেশব্যাপী কারফিউ জারি করার পর থেকে দ্বীপটির প্রধান বিমানবন্দরগুলো বন্ধ রয়েছে আর রাস্তাগুলো প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে হোলনেস বলেন, 'মানবিকভাবে যতটুকু সম্ভব আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে ছেড়ে দিচ্ছি।’

এবারের ঘূর্ণিঝড়ের রূপ আগের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা বলে জানান স্থানীয়রা।

পূর্ব ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইনসের প্রধানমন্ত্রী রালফ গনসালভেস এক রেডিও সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বেরিলের আঘাতে দেশটির ইউনিয়ন দ্বীপ ‘চূর্ণ’ হয়ে গেছে।

"সবাই গৃহহীন। এমন দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পুনর্নির্মাণ একটি দানবীয় প্রচেষ্টা হতে চলেছে।”

সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনসের কৃষি মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব নেরিসা গিটেনস-ম্যাকমিলান দেশটির ৫০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সম্ভাব্য খাদ্য ঘাটতির বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

জ্যামাইকা জুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ব্যাপক ছিল এবং উপকূলের নিকটবর্তী কিছু রাস্তা ধ্বংস হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ হারিকেনটি জ্যামাইকার রাজধানী কিংস্টন থেকে প্রায় ১৬১ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থান করছিল। হারিকেনটির কেন্দ্র কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ বরাবর এগিয়ে যাচ্ছে আর রাতের মধ্যেই সেখানে ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি বিরাজ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বেরিল ঘণ্টায় একটানা সর্বোচ্চ ২০৯ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে।

এনএইচসি জানিয়েছে, আগামী দু-একদিনের মধ্যে বাতাসের শক্তি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ অতিক্রম করার সময় বেরিলের শক্তি বড় হারিকেন কাছাকাছিই থাকবে।

এনএইচসি জানিয়েছে, বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাস 'প্রাণঘাতী ঢেউ সৃষ্টি করতে পারে। এমনকী বর্তমান পরিস্থিতি ছাড়িয়ে যেতে পারে' বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কেন্দ্রটি আরও জানিয়েছে, জ্যামাইকা, কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের পাশাপাশি মেক্সিকোর ইউকাতান উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলের জনপ্রিয় সৈকত রিসোর্ট কানকুনসহ পুরো অঞ্চলে হারিকেন সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

ইউনিয়ন দ্বীপে ৯০ শতাংশেরও বেশি ভবন ধ্বংস হয়েছে বলে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

গ্রানাডায় প্রধানমন্ত্রী ডিকন মিচেল ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনজনের মৃত্যুর খবরও নিশ্চিত করেছেন তিনি।

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে আট হাজারেরও বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ৪০০ বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে।

এনএইচসি সতর্ক করে বলেছে, বেরিল বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই মেক্সিকোর ইউকাতান উপদ্বীপে হারিকেন হিসেবে আঘাত হানতে পারে।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top