ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


নবান্নের আমন্ত্রনে হেমন্তের আগমন


প্রকাশিত:
২০ অক্টোবর ২০১৯ ১০:২৫

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০১:০৫

ছবি: সংগ্রহীত

ষড়ঋতু চতুর্থ ঋতু হচ্ছে হেমন্ত। আমাদের প্রকৃতিতে শীতের বার্তা নিয়ে আসে এই ঋতু। তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। ‘মরা’ কার্তিকের পর আসে সর্বজনীন লৌকিক উৎসব নবান্ন। ‘অগ্র’ ও ‘হায়ণ’ এ দু’অংশের অর্থ যথাক্রমে ‘ধান’ ও ‘কাটার মওসুম’। গ্রামীণ জনপদে এখন হালকা শীতের আমেজ। আকাশ থেকে খণ্ড খণ্ড মেঘ সরে গিয়ে উদোম হয়েছে বিশাল নীল আকাশ।

হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসবের সূচনা হয়। নবান্ন (নতুন অন্ন) পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। নবান্ন হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল তোলার পরদিনই নতুন ধানের নতুন চালের ফিরনি-পায়েশ অথবা ক্ষীর তৈরি করে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়। নবান্নে জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়, মেয়েকেও বাপের বাড়িতে ‘নাইওর’ আনা হয়।

নবান্নে নানা ধরনের দেশীয় নৃত্য, গান, বাজনাসহ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়। লাঠিখেলা, বাউলগান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি, খৈ, মোয়ার পসরা বসে গ্রাম্য মেলায়।

এখন আদিগন্ত মাঠ জুড়ে ধানের প্রাচুর্য। হলুদে-সবুজে একাকার অপরূপ প্রকৃতি। আর শেষ বিকালে কুয়াশার আবছা চাদরে ঢাকা পড়ে নামছে সন্ধ্যা। অনেক কিছুর বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে এসেছে হেমন্ত।

ষড়ঋতুর এই দেশে জলবায়ুর যে নিত্য বদল। যার ফলে অগ্রহায়ণে ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে জেকে বসতে শুরু করবে শীত। হেমন্তকে সবচেয়ে চেনা রুপ হচ্ছে ভোরের শিশির। খুব ভোরে শীতল বাতাস সবুজ পাতার গায়ে জমে থাকা শিশির বিন্দুর অপার্থিব দৃশ্যমালা রচনা করে।

হেমন্ত প্রকৃতিতে আসে এক আশ্চর্য সময় হয়ে। এই সময়ে বৃক্ষরাজি ভরে যায় সবুজে। এর সঙ্গে ভরা থাকে খাল-বিল নদী-নালা। বিল জুড়ে সাদা-লাল শাপলা আর পদ্ম ফুলের সমারোহ। সাধারণত হেমন্তের দুই রূপ দেখা যায় প্রথম মাসটির এক রূপ। পরের মাসটির অন্য। এক সময় হেমন্তের প্রথম মাসটি ছিল অভাব-অনটনের। ফসল হতো না। বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্যাভাব দেখা দিত। কার্তিকের দুর্নাম করে তাই বলা হতো ‘মরা কার্তিক’। 

অগ্রহায়ণে দেখা যায় আবার উল্টো রুপ। এমাসে নবান্নের সমৃদ্ধি থাকে। এ সময় মাঠের সোনালি ফসল কাটা শুরু হয়। কয়েক দিনের মধ্যে গোলা ভরে ওঠে কৃষকের। হেমন্তের বাতাসে ভেসে বেড়ায় পাকা ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ। বাড়ির আঙিনা নতুন ধানে ভরে ওঠে। কৃষক বধূরা ধান নতুন চাউল বানাতে ব্যস্ত থাকে। প্রতি ঘর থেকে আসে ঢেঁকিতে ধান ভানার শব্দ। দিনে দিনে বদলাচ্ছে সেই হিসাব-নিকাশ। 

কার্তিক মাসেই হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠে আগাম আমন ধানের শীষ। পাকা ধান কাটা শুরু হয়ে যায়। অগ্রহায়ণ পুরোটাজুড়ে সারা বাংলায় চলবে নবান্ন উৎসব। বাঙালির প্রধান ও প্রাচীনতম উৎসবগুলোর অন্যতম নবান্ন।

এ ঋতুর বিষয় আবহাওয়া বিদরা বলেন, হেমন্তের শুরুতেই হালকা কুয়াশার চাদরে ছেয়ে যেতে শুরু করেছে প্রকৃতি। ভোরের শিশির ভেজা ঘাস ও কাঁচা-পাকা ধানের শীষে মুক্তোদানা শীতের আগমণের জানান দিচ্ছে। তবে নভেম্বরে পুরোপুরি শীত আসবে।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top