ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২রা আশ্বিন ১৪৩১

উড়োজাহাজের জানালার কোনাগুলো গোলাকার কেন


প্রকাশিত:
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:২২

আপডেট:
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০১:২২

আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবনের জানালা সাধারণত ত্রিভুজাকার বা আয়তাকার হয়। কিন্তু এসব ভবনে গোলাকার কোণের জানালাও সাধারণত দেখা যায় না। গোলাকার জানালাকে স্থাপত্যবিদ্যার ভাষায় বলে ‘অকুলাস’। এটি বাড়ির নকশায় একটি অনন্য মাত্রা যোগ করে।

কিন্তু উড়োজাহাজের কথা ভাবুন। উড়োজাহাজ শিল্পের প্রথম দিকে থেকে দীর্ঘ সময় ধরে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে বর্গাকার জানালা ছিল। তবে এখন এসব জানালা সব সময় গোলাকার কোণের হয়ে থাকে। এগুলো কখনই জ্যামিতিক আয়তাকার হয় না।

মূলত কিছু দুর্ঘটনার পরই উড়োজাহাজের জানালার নকশা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন প্রকৌশলীরা। ১৯৫০–এর দশকে, বাণিজ্যিক এয়ারলাইনগুলো ব্যবসা বাড়াতে শুরু করে, আকাশে তাদের বেশ দাপট বাড়তে থাকে। এর মধ্যে দুটি ‘ডি হ্যাভিল্যান্ড কমেট’ উড়োজাহাজ ১৯৫৩ ও ১৯৫৪ সালে আলাদাভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আর এই দুর্ঘটনার কারণ বর্গাকার জানালা। উড়োজাহাজ দুটি মাঝ আকাশে ভেঙে পড়ে, এতে ৫৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। বিশেষ করে, বর্গাকার জানালার চোখা কোণগুলো অত্যধিক চাপ সহ্য করতে পারে না, ফলে জানালাগুলো ফেটে যায় এবং উড়োজাহাজ ধ্বংস হয়ে যায়। বর্গাকার জানালার চারটি চোখা কোনায় প্রায় ৭০ শতাংশ চাপ পড়ে, এতে একটি উড়োজাহাজ বারবার ব্যবহারের করলে এগুলো ভেঙে যায়।

প্রকৌশলীরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেন, উড়োজাহাজের বর্গাকার জানালার প্রান্তগুলো চোখা হওয়ার কারণে কোণগুলোতে চাপ কেন্দ্রীভূত হতে থাকে। এভাবে চাপ কেন্দ্রীভূত হতে হতে প্রান্তগুলোতে ধীরে ধীরে ছোট ফাটল বা ত্রুটি দেখা দেয়।

উড়োজাহাজ আকাশে যে উচ্চতায় ওড়ে, সেখানে বায়ুচাপ অনেক কম থাকে। বর্গাকার জানালা ঘন ঘন চাপের পার্থক্য সহ্য করতে না পেরে প্রান্তগুলো ভেঙে পড়তে থাকে।

অন্যদিকে গোলাকার জানালায় চাপকে সমানভাবে সবখানে ছড়িয়ে পড়ে। কারণ গোলাকার জানালার কোনো কর্নার বা কোনা নেই যা চাপকে কেন্দ্রীভূত করতে পারে। ফলে এটিতে ফাটল বা ভাঙনের আশঙ্কা কমায়। উপবৃত্তাকার আকারের চাপ সহ্য ক্ষমতা বেশি ও বিকৃতি প্রতিরোধী। ফলে এটি উড়োজাহাজের ভেতরের এবং বাইরের চাপের পার্থক্য বেশি সহ্য করতে পারে।

এসব জানালার নিচে আবার ছোট্ট গর্ত থাকে। এগুলো ‘ব্লিড হোলস’ নামে পরিচিত। এগুলো আরও একটি সুরক্ষার স্তর যোগ করে। জানালার গর্তটি বায়ু চলাচল করার সুযোগ দেয়। বায়ুর প্রবাহের মাধ্যমে উড়োজাহাজের ভেতরের এবং বাইরের চাপের মধ্যে ভারসাম্য রাখে এসব ছিদ্র।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top