ঢাকা রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫শে ভাদ্র ১৪৩১


লেজার ব্যবহার করে প্লাস্টিক দূষণ কমানোর চেষ্টা


প্রকাশিত:
১৭ জুলাই ২০২৪ ১৯:২৯

আপডেট:
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪২

লেজার প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্লাস্টিক ভাঙার একটি যুগান্তকারী পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই পদ্ধতি বিশ্বের প্লাস্টিক দূষণ সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে ধারণা তাদের।

লেজার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্লাস্টিক ও অন্যান্য উপাদানকে ছোট ছোট টুকরোয় ভাঙা হয়, যার ফলে সেগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে। এ প্রক্রিয়াটি কাজ করে এইসব উপাদানকে দ্বিমাত্রিক বিভিন্ন উপাদানের ওপর বসিয়ে, যেগুলো ‘ট্রানজিশন মেটাল ডাইকালকোজেনাইডস’ নামে পরিচিত। এর পর সেগুলোকে কম ক্ষমতার আলোর সামনে তুলে ধরা হয়।

এ নতুন পদ্ধতি মানুষের প্লাস্টিক ধ্বংস করার উপায়ে বিপ্লব বয়ে আনতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ, যেখানে প্রচলিত বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্লাস্টিক ভাঙার বিষয়টি বেশ জটিল।

“এ ধরনের বিশেষ বিক্রিয়া ব্যবহার করে আমরা পরিবেশ দূষণকারী বিভিন্ন উপাদানকে মূল্যবান ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য রাসায়নিকে রূপান্তর করার বিভিন্ন নতুন উপায় পেতে পারি, যা আরও টেকসই অর্থনীতি তৈরির ক্ষেত্রে সহায়ক,” বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস’-এর অধ্যাপক ও এ প্রকল্পের অন্যতম প্রধান ইউবিং ঝেং।

প্লাস্টিক দূষণ প্রধান বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর একটি, যেখানে প্রতি বছর লাখ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য ভাগাড় ও বিভিন্ন মহাসাগরে ফেলে দেওয়া হয়।

প্লাস্টিক ভাঙার প্রচলিত বিভিন্ন পদ্ধতিতে অনেক শক্তি খরচ হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ও তেমন কার্যকরও নয়। তবে, এই নতুন উদ্ভাবন দূষণ কমিয়ে আরও দক্ষ পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তির দিকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।

নতুন এ গবেষণায় প্লাস্টিকের রাসায়নিক বন্ধন ভাঙতে কম শক্তির আলো ব্যবহার করে নতুন বন্ধন তৈরি করেছেন গবেষকরা, যা বিভিন্ন উপাদানকে আলোকিত কার্বনের বিন্দুতে রূপান্তর করে।

এ ধরনের কার্বনভিত্তিক ন্যানোম্যাটেরিয়ালের চাহিদা অনেক বেশি। কারণ, ভবিষ্যতে কম্পিউটারের মেমরি স্টোরেজ ডিভাইসের মতো অ্যাপ্লিকেশনে এগুলো ব্যবহারের সম্ভাবনা আছে।

“আমরা এমন প্লাস্টিক ব্যবহারের সুযোগ পাব, যা কখনও নিজে থেকে ভেঙে যাবে না ও বিভিন্ন শিল্পের জন্য উপকারী কিছুতে পরিণত হতে পারে, এ ভাবনা বেশ রোমাঞ্চকর,” বলেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে’র গবেষক ড. জিংগাং লি, যিনি অস্টিন শহরের ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস (ইউটি)’তে এ গবেষণাটি শুরু করেছিলেন।

এ গবেষণায় ব্যবহার করা বিক্রিয়াকে ডাকা হচ্ছে ‘সি-এইচ অ্যাক্টিভেশন’ বলে, যা একটি জৈব অণুতে কার্বন-হাইড্রোজেনে বিভিন্ন বন্ধন ভেঙে দেয় ও এগুলো থেকে নতুন রাসায়নিক বন্ধন তৈরি করে।

এ গবেষণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্বি-মাত্রিক উপাদান বিক্রিয়াটির অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে, যার ফলে হাইড্রোজেনের বিভিন্ন অণু গ্যাসে পরিণত হয়। এর মাধ্যমে কার্বনের বিভিন্ন অণু একে অপরের সঙ্গে বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন তথ্য-সংরক্ষণকারী বিন্দু গঠন করে।

এই ‘সিএইচ অ্যাক্টিভেশন’ প্রক্রিয়াটি শিল্পখাতে ব্যবহার করতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবে, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে এ গবেষণাটিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে নোরিজ।

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার কমিউনিকেশন’-এ, যা নিয়ে কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস’, জাপানের ‘তোহোকু ইউনিভার্সিটি’, ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে’, ‘লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি’, ‘বেইলর ইউনিভার্সিটি’ ও ‘পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি’সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top