ঢাকা শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসছে জেলিফিশ, ক্ষতির মুখে জেলেরা


প্রকাশিত:
২৫ মার্চ ২০২৪ ২১:৪১

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:১২

হঠাৎ করেই পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ও এর আশপাশের বিভিন্ন চরে পানির সাথে সাদা জেলিফিশ ভেসে আসছে। এসব জেলিফিশ সৈকতে মরে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। জেলিফিশের আধিক্য এত বেশি দেখা দিয়েছে যে সাগরে মাছ ধরার জালেও ঝাঁকে ঝাঁকে সেগুলো আটকা পড়ছে। এতে তেমন মাছ পাচ্ছেন না জেলেরা।

মৎস্য বিভাগ বলছে, সাগরের পানি অতিরিক্ত লবণাক্ত হওয়ায় এবং কচ্ছপ কমে যাওয়ার কারণে প্রতিবছর এসময় জেলিফিশ ভেসে আসছে। গবেষকদের মতে, জেলিফিশ কচ্ছপের প্রধান খাবার। তাই কচ্ছপ কমে যাওয়ায় এদের পরিমাণ বেড়েছে।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলিফিশের মাথা, হৃদপিণ্ড, লেজ, মেরুদণ্ড বা হাত-পা বলে কিছু নেই। এটি সমুদ্রের এক আজব প্রাণী। প্রায় ৭০০ মিলিয়ন বছর আগের এ প্রাণীকে বিজ্ঞানীরা ‘ডাইনোসর যুগের প্রাণী’ হিসেবে বিবেচনা করেন। প্রতিবছর মার্চ মাসের শুরুতে বা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত উপকূলে বিপুল পরিমাণ সাদা জেলিফিশের দেখা মেলে। এবারও সৈকতে ভেসে এসেছে অসংখ্য জেলিফিশ। এগুলোর মধ্যে কোনোটা আকারে ছোট, কোনোটা বড়। দেখতে অনেকটা অক্টোপাসের মতো। এসব জেলিফিশ মরে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

সৈকতের লেম্বুরবন এলাকার জেলে আব্দুল করিম বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ জেলিফিশের উৎপাত বাড়তে শুরু করে। প্রথম দিকে কম থাকলেও এখন পরিমাণটা অনেক বেশি। সাগরে জালে কোনো মাছ ধরা পড়ছে না জেলিফিশের কারণে। পুরো জাল আটকে থাকে জেলিফিশে। আমাদের জাল, রশি নষ্ট করে ফেলে তাই জাল তুলে নিয়ে আসছি। জেলিফিশ কমলে আবার জাল দেবো।’

পাঞ্জুপাড়া এলাকার জেলে মোহাম্মদ বাচ্চু বলেন, ‘প্রতিবছরই এ মাসে নোনাগুলো (জেলিফিশ) সাগরে দেখা যায়। ১৫০ হাত জালে ১৫০-২০০ পিসের বেশি নোনাগুলো আটকে যায়। ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে জাল তুলে তীরে বসে আছি। শুধু তাই নয়, এগুলো শরীরে লাগলে চুলকানি দেখা দেয়। চোখ লাল হয়ে যায়। জেলিফিশ নিয়ে আমরা জেলেরা সমস্যায় পড়েছি।

সমুদ্রের নীল অর্থনীতি, উপকূলের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-২ বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, আমাদের গবেষণা অনুযায়ী যেটা বুঝতে পারছি সাগরে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় জেলিফিশ ভেসে আসছে। এছাড়া কচ্ছপের মূল খাবার জেলিফিশ। কিন্তু সাগরে কচ্ছপ নেই বললেই চলে। জেলেদের কিছু জালে কচ্ছপ আটকে গেলেও ছাড়ানোর সুযোগ নেই। এ কারণে কচ্ছপের পরিমাণ সাগরে কমে গেছে।

সাগরিকা স্মৃতি আরও বলেন, বর্তমানে অনেক বেশি জেলিফিশ সাগরে ভেসে আসার কারণে জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না। জালে অনেক বেশি জেলিফিশ আটকা পড়ায় জালের ওজন বেড়ে যায়। এ কারণে তারা জাল তুলতে পারেন না। জাল কেটে দিয়ে চলে আসেন।’

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, লবণাক্ততার কারণে এটি হতে পারে। আশা করি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ সমস্যা থাকবে না। তবে এ পুরো বিষয়টা প্রাকৃতিক।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top