ঢাকা রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


৫ কোটি টাকার সরকারি জমি দখল করতে 'হিন্দু পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ'


প্রকাশিত:
২০ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৫০

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ১৫:৫৯

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করতে হিন্দু পাড়ায় মসজিদ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী একটি চক্রের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সামনে মসজিদ নির্মাণ করে তার পাশে সড়ক ও জনপথের (সওজ) প্রায় ৪৭ শতাংশ জমি দখল করে ফেলেছে চক্রটি। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।

সরজমিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের ছোট বালুয়াকান্দি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ ঘেঁষে একটি রাস্তা নির্মাণ করে তার উভয় দিকে বালু ভরাট করা হয়েছে। এক প্রান্তে ছোট বালুয়াকান্দি আল-আকসা জামে মসজিদ নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কেউ জায়গা লিখে না দিলেও জোরপূর্বক ব্যক্তি মালিকাধীন জায়গা, সড়ক ও জনপথের জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদটি। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হলেও সামনে মসজিদ থাকলে এই জায়গার অবৈধ স্থাপনা কেউ উচ্ছেদ করতে আসবে না- এমন পরিকল্পনা থেকেই মসজিদে নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা তাদের। তারা জানান, এর নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী মনিরুজ্জামান মনিরের নেতৃত্বে একটি চক্র।

মসজিদের দক্ষিণ দিকের বাসিন্দা শ্রীনিবাস দাস বলেন, গত কয়েকদিন আগে তার বাড়ির সীমানাঘেঁষে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামটির এই মহল্লায় প্রায় ৩৫টি পরিবারের বাস যার অধিকাংশই সনাতন ধর্মানুসারী। মসজিদটির একপাশে মহাসড়ক, দুই পাশে হিন্দু পরিবার ও একপাশে একটি মুসলিম পরিবারের বাস।

স্থানীয় বাসিন্দা শেখ মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ বলেন, আধাপাকা এই মসজিদটি প্রায় ৩ শতাংশ জায়গার ওপর বানানো হয়েছে। এর মধ্যে এক শতাংশের মতো তাদের জায়গা রয়েছে। তবে তারা জায়গাটি মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দেননি, শুধুমাত্র মৌখিকভাবে মসজিদ নির্মাণ করা অনুমতি দিয়েছেন। তবে এখানে সড়ক ও জনপথের জায়গাও রয়েছে।

মসজিদের সামনে একটি রাস্তা রয়েছে যার দুপাশে বালু ভরাট করা হয়েছে। শুনেছি মনিরুজ্জামান মনির নামে একজন রাস্তা নির্মাণ করেছেন এবং বালু ভরাট করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মরণ চন্দ্র শীল বলেন, আগে এখানে একটি বড় খাল ছিল যার আনুমানিক প্রস্থ ১৭২ ফুট। খালটির অধিকাংশই এখন ভরাট হয়ে গেছে। কারা ভরাট করছে আমরা জানি না, শুনেছি খাল ভরাট করে এখানে নাকি সিএনজি ফিলিং স্টেশন বানানো হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা শামীম বলেন, মসজিদ বানাতে অন্যের জমি দখল করা হয়েছে। কেউ জমি ওয়াকফ করে না দিলেও জোরপূর্বক তৈরি করা হয়েছে মসজিদ। মসজিদের পাশে সড়ক ও জনপথের কিছু জায়গাও দখল করা হয়েছে। আশা করি সড়ক ও জনপথ তাদের জায়গা উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

বিষয়টি সম্পর্কে হাফেজ মাওলানা আল আমিন বলেন, মসজিদ নির্মাণ করতে হবে পরিশুদ্ধ জায়গায়। সেজন্য জায়গা ওয়াকফ করে দিতে হয়। অন্যের জায়গা জোরপূর্বক দখল করে অথবা সরকারি জায়গা দখল করে মসজিদ নির্মাণ করা উচিত নয়।

বিষয়টি সম্পর্কে অভিযুক্ত মনিরুজ্জামান মনিরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'সড়ক ও জনপথের খালের পেছনে আমার একটি প্লট রয়েছে যেখানে আমি ইট রেখে ব্যবসা করি। সেখানে যাতায়াতের জন্য গত বছর আমি একটি রাস্তা তৈরি করি এবং এবছর রাস্তার উভয় পাশের কিছু অংশ ভরাট করি। আমি জায়গা দখল করিনি বরং সাময়িকভাবে ব্যবহার করছি। সড়ক ও জনপথ বললে আমি আমার বালু উঠিয়ে নেব। আমি এ জায়গাটি ইজারা আনতে চেয়েছিলাম। এজন্য আমি গত বছর সড়ক ও জনপথ নারায়ণগঞ্জ ডিভিশন অফিসে আবেদন করেছিলাম। তবে এখনো পর্যন্ত তারা আমাকে ইজারা দেয়নি। আর অন্যের জমি দখল করে মসজিদ নির্মাণের যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে আমি অবগত নই। কে বা কারা মসজিদ নির্মাণ করেছে তা আমি জানি না।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি। সরজমিন ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়েছি। তিনি প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। সড়ক ও জনপথের জায়গায় কেউ দখল করতে পারবে না। কেউ যদি দখল করে থাকে, আমরা জায়গাটি দখল মুক্ত করতে যা করা দরকার তা ই করব।


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top