ঢাকা মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১


শিশুদের হাতে বিনামূল্যে ১৫ হাজার চারা গাছ তুলে দিয়েছেন খলিল মিয়া


প্রকাশিত:
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৩০

আপডেট:
৭ মে ২০২৪ ০০:৪০

গাজীপুরের শ্রীপুরের নিভৃত একটি গ্রাম সাইটালিয়া। অভাব-দরিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে চলে গ্রামটির অধিকাংশ মানুষ। যাদের মূল কর্মই হলো কৃষিকাজ। অভাব আর দরিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এই গ্রামেই বড় হয়েছেন খলিল মিয়া।

বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলীও একজন কৃষক। চার ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে তৃতীয় খলিল মিয়া। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে বাবার সঙ্গে সংসারের হাল ধরতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পেশায় কাজ করতে হয়েছে তাকে। তিনি এখন সেনিটারি মিস্ত্রি।

ছোটবেলায় লেখাপড়ার সুযোগ না পেলেও খলিল মিয়ার বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার প্রতি বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। বিভিন্ন পেশায় যুক্ত থাকলেও কাজের ফাঁকে শ্রম দিয়ে বাড়ির আঙিনায় গড়ে তুলেছেন একটি নার্সারি। সেখান থেকে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে গাছের চারা তুলে দিয়ে আনন্দ পান তিনি। তার নার্সারির কোনো চারা তিনি এখন পর্যন্ত বিক্রি করেননি।

গত তিন বছরে সে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর ও কাপাসিয়া এলাকার ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে খলিল মিয়া প্রায় ১৫ হাজার ফলজ গাছের চারা বিতরণ করেছেন। এখন তার শখের পরিধি আরও বেড়েছে। তিনি জেলার সব বিদ্যালয়েই পৌঁছে দিতে চান তার নার্সারির চারা গাছ। এর মাধ্যমে বৃক্ষের প্রতি শিশুদের ভালোবাসা বাড়ানোই তার লক্ষ্য।

খলিল মিয়া জানান, তার পরিবার এখনও অস্বচ্ছল। তিনি নিজে সংসার চালাতে সেনিটারি মিস্ত্রির কাজ করেন। কাজের ফাঁকে কখনও সকাল কখনও বিকেলে সময় দিয়ে গড়ে তুলেছেন নার্সারি। তার নার্সারিতে ফলদ গাছের চারা উৎপাদন করেন। যে চারা তিনি বিভিন্ন প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ শুরু করেন। এমনকি চারা গাছ বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে যে গাড়ি ভাড়া ব্যয় হয় সেটাও তিনি বহন করেন।

তিনি বলেন, দিন দিন আমার বিনামূল্যের চারা বিতরণের শখ যেন বাড়ছে। প্রতিবছর আমি ৫ হাজার চারা বিতরণের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছি। গত তিন বছরে প্রায় ১৫ হাজার গাছের চারা বিতরণ করেছি। এসব চারার মধ্যে আছে আমড়া, পেয়ারা, কাঁঠাল ও আমের চারা। বিদ্যালয় ছুটির পর যখন কোমলমতি শিশুদের হাতে বিনামূল্যে একটি করে চারা তুলে দেই তখন আমি প্রশান্তি অনুভব করি।

খলিল মিয়ার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী বলেন, আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এখন দেশ গড়ার দায়িত্ব এ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের। আমার ছেলে দেশের সেবা করছে দেখতে ভালো লাগে।

উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লুৎফর রহমান ফরহাদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমার বিদ্যালয়ে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে ফলজ গাছের চারা পেয়েছে। খলিলের এমন উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃক্ষের প্রতি ভালবাসা তৈরি হচ্ছে, গাছ রোপণে তারা উৎসাহিত হচ্ছে। এর চেয়ে ভালো উপহার আর কি হতে পারে।

গোদারচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেরিন হাসান লুবনা বলেন, তিনি গত বছর তার বিদ্যালয় থেকে একটি চারা পেয়েছিলেন। সেটি রোপণ করে পরিচর্যা করায় এবার ফল এসেছে।

শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা নাসরিন বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণের এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও বিনামূল্যের গাছের চারা পেয়ে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যায় উদ্যোগী হয়ে ভূমিকা রাখতে সহায়তা করছে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, খলিল মিয়ার এমন উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। আমি নিজেও একটি বিদ্যালয়ে খলিলের উদ্যোগে বৃক্ষ বিতরণ করছি। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। খলিলের মতো অনেকেই এ কাজে এগিয়ে আসা উচিত।

 


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top