ঢাকা শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


পানির জন্য হাহাকার মৌলভীবাজারের বড়লেখার ১২ গ্রামে হাহাকার


প্রকাশিত:
১৯ জুলাই ২০২১ ০৬:১৪

আপডেট:
১৯ জুলাই ২০২১ ১০:২০

উঁচু পাহাড়ের ঝিরি থেকে প্লাস্টিকের পাইপ ও বাঁশের মাধ্যমে বেয়ে পানি পড়ছে চৌবাচ্চায় (ট্যাঙ্কে)। খাবার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারের জন্য সেই পানি সংরক্ষণ করছিলেন দক্ষিণ গান্ধাই (বোবারথল) গ্রামের ফখর উদ্দিন। অপরিচিত কারও কাছে পানি সংগ্রহের এই পদ্ধতি নতুন মনে হলেও ফখর উদ্দিনের কাছে তা নিত্যদিনের। এই গ্রামে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। এছাড়া পানি সংগ্রহের কোনো উৎসও নেই। এই কারণে ফখর এভাবেই পানি সংরক্ষণ করছিলেন। শুধু ফখর উদ্দিন নয়, তার মতো বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের বাঙালি ও আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষকে কয়েক যুগ ধরে বিভিন্ন পদ্ধতিতে পাহাড়ি ঝরনা কিংবা পাহাড় চুঁইয়েপড়া পানি সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। এই পানি তারা খাবারের পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করছেন।

এতে প্রায়ই এলাকার অনেকে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরজমিন দক্ষিণ গান্ধাই গ্রামে গিয়ে কথা হয় এলাকার বাসিন্দা ফখর উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি খাবার ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য এই পানি সংগ্রহ করেছি। এভাবে দীর্ঘদিন থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। কারণ আমাদের এলাকা পাহাড়ি হওয়ায় পানির কোনো উৎস নেই। এখানে কোনো নলকূপও নেই। আমাদের বড় কষ্ট হচ্ছে পানির জন্য। এই কষ্ট কবে ঘুঁচবে তা জানি না।’ তিনি বলেন, ‘এখানে বর্ষায় মোটামুটি পানি পাওয়া যায়। কিন্তু শুকনো মৌসুমে বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি আনতে হয়। সে পানি ময়লাযুক্ত থাকে। চুলায় ফুটিয়ে পান করতে হয়। নোংরা পানি খেয়ে অনেকেই নানারকম অসুখে পড়ে।’ একই এলাকার বাসিন্দা রইছ আলী বলেন, ‘আমরা এমনিতেই দুর্গম এলাকায় আছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কষ্ট পানির জন্য। বর্ষাকালে মোটামুটি পানি পাওয়া যায়। কিন্তু শুকনো মৌসুমে কষ্ট বেশি শুরু হয়। তখন বিভিন্ন জাগা থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। ভালো পানি (সুপেয় পানি) তো পাওয়া যায় না।  
এলাকার বাসিন্দা সোহাগ দর্জি বলেন, ‘সারা বছরই সুপেয় পানির সংকট থাকে। তবে শুষ্ক মৌসুমে সংকট বেশি হয়। এ সময় ঝরনাগুলো শুকিয়ে যায়। তখন পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়। এই এলাকায় বর্ষার সময় পানি মেলে। তা পাহাড়ি ঝরনা থেকে বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করতে হয়। বর্ষার সময় ছোট ছোট কুয়ায় পানি ধরে রাখা হয়।’ দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘এলাকাটি খুবই দুর্গম। নিচে পাথর থাকায় নলকূপ স্থাপন করা যায় না। রিং টিউবওয়েল (পাতকুয়া) করলেও পানি পাওয়া যায় না। ওই অবস্থায় মানুষ খুব কষ্ট করছে। কয়েকটি দপ্তর থেকে রিং কুয়া দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শুকনো মৌসুমে এগুলোতে পানি পাওয়া যায় না। বছরের প্রায় ৫ মাস পানির জন্য মানুষকে বেশি কষ্ট করতে হয়। অন্য সময় পানি পাওয়া যায়। কিন্তু এগুলো বিশুদ্ধ নয়। এতে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।  
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (বড়লেখা কার্যালয়)এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, ‘বড়লেখার বিভিন্ন এলাকায় আমরা গভীর নলকূপ স্থাপন করেছি। কিন্তু বোবারথল পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় মাটির ৫০-১০০ ফুট নিচে পাথরের স্তর পাওয়া যায়। সে কারণে ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করা যায় না।


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top