ঢাকা শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে সিএসআর (কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবলিটি) ফান্ড


প্রকাশিত:
৫ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:৪৮

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:২০

ছবি: গুগল

পৃথিবীর সব দেশেই সিএসআর বা ফাউন্ডেশন জাতীয় সহায়তাকারী সংস্থা বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের জন্য দান বা অনুদানের অর্থ বরাদ্দ করে থাকে ।
সিএসআর ফান্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের উদ্দেশ্যে । পৃথিবীতে ধনী দেশগুলো সর্বপ্রথম এই ধরনের ফান্ডের ব্যবহার শুরু করে।এই উদ্যোগে কর্পোরেট ব্যবসার জগতের সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়।

বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সিএসআর ফান্ড ব্যবহারে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কিছু নিদের্শনা থাকে। তবে ব্যবসাটির ধরন মুনাফামুখী ব্যবসা হলে সেক্ষেত্রে অর্জিত মুনাফার একটি অংশ সিএসআর কাজের জন্য রাষ্ট্রের সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়। আবার প্রতিষ্ঠানের Stakeholders ও মানব সম্পদ উন্নয়নমূলক কাজে ও স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সিএসআর ফান্ড ব্যবহার হয়ে থাকে।

গবেষণায় দেখা যায়, মধ্যযুগীয় সভ্যতা থেকে মানুষ অনুভব করতে শিখে যে ব্যবসা একটি লাভজনক অস্তিত্ব। আর তখন থেকেই মানুষ মূলত মুনাফামূখী ব্যবসার পিছনে ছুঁটতে থাকে । এভাবে কালের বিবর্তনে মানুষ তার ব্যবসা থেকে আরো বেশি মুনাফা পেতে আশা করে । একটি সময় মানুষের সৃজনশীল চিন্তাধারার যে সেলুলয়েড ফিতা থাকে সেগুলো পরিবর্তিত হয়ে স্বার্থপর মানসিক চিন্তাকে ধারণ করে থাকে। এই ধারাতেই পৃথিবীতে বসবাসরত মানুষগুলো সামাজিক সমস্যার বেড়াজালে ক্রমান্বয়ে বন্দি হয়ে পড়ে । শুরু হয় ব্যক্তিগত সুখের জন্য ব্যক্তিস্বার্থের ব্যবসা । ফলে প্রাকৃতিক সম্পদে আচ্ছাদিত বেষ্টনীকে ঘিরে রাখা পৃথিবীর সম্পদকে শুধু ব্যক্তিগত সুখের জন্য ব্যবহারের ফলে পৃথিবীর অর্ধেক সম্পদ চলে যেতে থাকে সীমিত কিছু মানুষের হাতে। আর অর্ধেক সম্পদ থাকে পৃথিবীর বাকী সব মানুষের কাছে। একটি সময়ে পৃথিবীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভারসাম্য দুর্বল হয়ে পড়ে। আর তখনই পুঁজিবাদী অর্থনীতির নীতি প্রণেতারা তাদেরই তৈরীকৃত অর্থনীতির স্বার্থপর ভাষায় 'দান' বা 'অনুদান' শব্দের ব্যবহার শুরু করে । মানুষের স্বার্থপর মানসিকতার যে নির্দেশনা থাকে তাতে ধরে ফাটল । মানুষের স্পর্শকাতর অনুভূতিকে জাগ্রত করার কারণেই গড়ে উঠে ফাউন্ডেশন বা সিএসআর ফান্ড।

ব্যাংক, বীমা, ইন্সুরেন্স, রিয়েল এস্টেট সহ যেকোন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানেই সিএসআর ফান্ড এর জন্য বাৎসরিক বরাদ্দ থাকে। যেগুলো ব্যবহৃত হয় দারিদ্র্য, বেকারত্ব, স্বাস্থ্য সেবা, প্রযুক্তি, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, পরিবেশ দূষণ, পুষ্টি ও খাদ্য, জলবায়ু, বন্যা, নারীর ক্ষমতায়ন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন খাতে। সিএসআর ফান্ডে টাকা অনুদান বা ব্যয় করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে।

একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৭ সালে করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) ফান্ড থেকে প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ৩২৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিলো দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছিলো শিক্ষা খাতে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী মোট ব্যয়ের ২০ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করার কথা থাকলেও প্রকৃত পক্ষে হয়েছিলো ১১ শতাংশ। এক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এগিয়ে থাকলেও সরকারি ব্যাংকগুলো ছিলো অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শিক্ষা খাতে ১২৭ কোটি টাকা সিএসআর থেকে ব্যয় করা হয়েছিলো। যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৩৯ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছিলো দুর্যোগ ব্যবস্থায়। এ খাতে গেছে মোট ব্যয়ের ২৯ শতাংশ বা ৯৪ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে ৩৬ কোটি টাকা দিয়েছিলো ব্যাংকগুলো; যা মোট সিএসআর ব্যয়ের ১১ শতাংশ। এছাড়া সংস্কৃতি, পরিবেশবান্ধব, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আয় উৎসারীসহ বিভিন্ন খাতে সিএসআর থেকে ব্যয় করেছিলো ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় ব্যাংকগুলোকে তাদের সিএসআর খাতের মোট ব্যয়ের ৩০ শতাংশ শিক্ষা খাতে, ২০ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে এবং ১০ শতাংশ জলবায়ু ঝুঁকি বা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মোট ব্যয়ের হার ঠিক থাকলেও স্বাস্থ্য খাতের দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছে ব্যাংকগুলো। ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলোর সিএসআর কার্যক্রমের বিবরণীতে দেখা যায়, জানুয়ারি-জুন ষান্মাষিকে রূপালী, বাংলাদেশ কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন, বিডিবিএল, আইসিবি ইসলামী ও বিদেশি উরি ব্যাংক সিএসআর খাতে কোন ব্যয় করেনি। এছাড়া জনতা, বেসিক, বাংলাদেশ কমার্স, মেঘনা, ব্যাংক আল ফালাহ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, হাবিব এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অফ পাকিস্তান সিএসআর খাতে খুব সামান্য পরিমাণ ব্যয় করেছে।

২০১৭ অর্থ বছরে সিএসআর খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। এ ব্যাংকের ব্যয়ের পরিমাণ ৫৯ কোটি টাকা। এছাড়া পর্যায়ক্রমে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ৪৪ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৩১ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ১৬ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক ১৫ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৪ কোটি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ১১ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংক ৯ কোটি, এবি ব্যাংক সাড়ে ৮ কোটি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ৮ কোটি টাকা সিএসআর খাতে ব্যয় করেছে।

অন্যদিকে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ জানুয়ারি-জুন সময়ে মোট এক কোটি বাহাত্তর লাখ টাকা ব্যয় করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শিক্ষা খাত। এ খাতে আটত্রিশ লাখ টাকা বা ২৩ দশমিক ০৩ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। তাছাড়া, তৃতীয় অবস্থানে আছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাত। এ খাতে মোট একত্রিশ লাখ টাকা বা ১৭ দশমিক ২২ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয় দশ লাখ টাকা বা ৬ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। এর বাইরে পরিবেশবান্ধব খাতে মোট ব্যয় হয়েছে উনিশ লাখ টাকা, সংস্কৃতি খাতে বিশ লাখ টাকা এবং আয় উৎসারী কর্মকান্ডে মোট সাত লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আর অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে এ ছয় মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এক টাকাও ব্যয় করেনি




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top