ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


উজাড় হচ্ছে গোদাগাড়ীর পদ্মার চরের বন


প্রকাশিত:
৯ মার্চ ২০২০ ২২:৫৭

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ২০:২১

ফাইল ছবি

পরিবেশ টিভি: সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ফরাদপুর এলাকায় পদ্মার চরে সরকারিভাবে বিশাল একটি বন গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীকে উপকারভোগী করে বনটি গড়ে তোলা হয়। চরে ২০১০-১১ সালের দিকে লাগানো গাছের ছোট ছোট চারাগুলো এখন বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। এখন বনটিতে নজর পড়েছে স্থানীয় একাধিক চক্রের।

স্থানীয়রা জানান, একাধিক অসাধু চক্র রাতের অন্ধকারে গাছ কেটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছে। এতে বনটি উজাড় হতে চলেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকার টনি, সোনারুল, উজ্জ্বল, কার্তিক, বাবু লালসহ স্থানীয় বেশকিছু ব্যক্তি বন থেকে গাছ কেটে নিয়ে যান। বনের আশপাশেই তাদের বাড়ি। এদের সঙ্গে বনের কিছু উপকারভোগীও জড়িত। শুধু তাই নয়, বন ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং বন বিভাগের কর্মীদেরও গাছ চোর চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। গত এক সপ্তাহ আগেও পুলিশ টনির বাড়ি থেকে বেশ কিছু গাছের গুঁড়ি উদ্ধার করেছে। এ নিয়ে ৪ মার্চ থানায় মামলা হয়েছে।

বনটিতে সরেজমিনে গিয়ে গাছ কাটার চিহ্ন পাওয়া গেছে। কিছু কিছু গাছের গোড়া থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে। কোনোটির আবার কাণ্ড থেকে কাটা হয়েছে। আবার কিছু কিছু গাছের গোড়ায় রয়েছে দা-কুড়ালের কোপ।

স্থানীয়রা জানান, যে যার মতো গাছ কেটে সাবাড় করছে। এসব গাছ কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন স’ মিলে। এ ছাড়া এলাকার ইটভাঁটাতেও বিক্রি করা হচ্ছে গাছ। স্থানীয়রা আরও জানান, এক সপ্তাহ আগে টনির বাড়ি থেকে গাছ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হলেও এর আগেও তার বাড়ি থেকে গাছ উদ্ধার হয়েছে। তখন মামলা হয়নি। বনে থাকা পাহারাদার এবং কমিটির লোকজনের গাছ চোর চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার কারণে চোরেরা নির্বিঘ্নে গাছ কেটে নিয়ে যায় বলেও দাবি করেন তারা। এর আগে সম্প্রতি কিছু গাছ বিক্রির জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়। তখনও বন বিভাগের কর্মীদের যোগসাজশে ঠিকাদারের লোকজন অতিরিক্ত গাছ কাটেন। নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর গ্রামের মেসার্স নাজিম স’ মিলের স্বত্বাধিকারী নাজিম উদ্দিন গাছগুলো নিলামে কিনেছিলেন। স্থানীয় লোকজন অতিরিক্ত গাছ কাটার বিষয়টি বুঝতে পেরে বাধা দেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বনে গিয়ে অতিরিক্ত গাছ কাটার সত্যতা পান। এ সময় জাকির হোসেন নামে ঠিকাদারের এক প্রতিনিধিকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এখন স্থানীয় একাধিক চক্র বন থেকে গাছ কেটে কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে।

চোরদের সঙ্গে বন ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজনের জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, এসব মিথ্যা কথা। ক’দিন আগে আমরাই চোর ধরেছি। এখন বন কর্মকর্তার সঙ্গে থানায় মামলা করতে এসেছি।

বন থেকে গাছ চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা বন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, যেখানে সম্পদ থাকবে সেখানে চোরও থাকবে। তারপরেও বন বিভাগের কর্মীদের পাহারাদার হিসেবে রেখে আমরা চুরি ঠেকানোর চেষ্টা করছি। আর কারও বাড়িতে বনের গাছ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এখনও গাছ চুরির ব্যাপারে মামলা হয়েছে।

গাছ চুরির অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে টনির মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। তার স্ত্রী রোখসানা বেগম ফোন ধরে জানান, তার স্বামী বাড়িতে নেই।

প্রসঙ্গত, চরাঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে ১ কোটি ৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয়ে গোদাগাড়ীর ফরাদপুর মৌজায় পদ্মার চরের ৯০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৩২ হাজার গাছ লাগিয়ে বনটি গড়ে তোলা হয়। বনের উপকারভোগী এলাকার ৫৪৯ ব্যক্তি। ২০১০-১১ অর্থবছরে ৫০ হেক্টর এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে সরকারিভাবে ৪০ হেক্টর জমিতে গাছ লাগিয়ে বনটি তৈরি করা হয়। বনে খয়ের, আকাশমণি, ইপিল, ঝাউ, রেইন্ট্রি কড়ই, বাবলা, শিশু, অর্জুন ও নিমসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে।


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top