ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


তাড়াশে ফসলি জমিতে পুকুর খনন থামছেই না


প্রকাশিত:
২৮ জানুয়ারী ২০২০ ০৮:২৪

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:০৮

ফাইল ছবি

প্রাইম বাংলা: সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে চলছে তিন ফসলি জমিতে গণহারে পুকুর খননের মহোৎসব। বেপরোয়া পুকুর খনন বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে মাইকিং করা হলেও এতে কেউ সাড়া দিচ্ছে না।

সরেজমিন দেখা গেছে, জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা ২০০১ উপেক্ষা করে খাদ্যশস্য ভাণ্ডারখ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশে গত পাঁচ-সাত বছরে ফসলি জমিতে পাঁচ শতাধিক পুকুর খনন করা হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের অগ্রহায়ণ মাস থেকে উপজেলার বিভিন্ন ফসলি মাঠে ১৫০-২০০ পুকুর খননের কাজ চলমান রয়েছে। আর ফসলির জমির অবৈধভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করে এসব ফসলি মাঠে পুকুর খননকালে তা বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসগুলো নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও অভিযানের পরই ওই প্রভাবশালীরা আবারও পুকুর খনন কাজে নেমে পড়ে।

কাউরাইল গ্রামের কৃষক আবেদ আলী জানান, তার গ্রামের আশপাশে ১০-১৫টির মতো পুকুর খননের কাজ চলমান রয়েছে। আর পুরো উপজেলায় পুকুর খনন কাজে কমপক্ষে ২০০-২৫০ মাটি কাটার মেশিন এক্সেভেটর কাজ করলেও উপজেলা প্রশাসনের মাইকিং করার কোনো প্রভাবই পড়েনি।

স্থানীয় একাধিক কৃষক জানান, ফসল উৎপাদনে কৃষকরা বেশি শ্রম ব্যয় করেও কাক্সিক্ষত লাভ না হওয়ায় ঝামেলাবিহীন অর্থ উপার্জনের জন্য তাড়াশ উপজেলায় পুকুর খনন করছেন।

কৃষকরা নিজের জমিতেই পুকুর খনন করে বাৎসরিক মোটা অঙ্কের লিজমানিতে এসব পুকুর মৎস্যচাষিদের কাছে লিজ দিচ্ছেন। আবার প্রভাবশালীরা সরকারি খাল দখল করে আঞ্চলিক ও গ্রামীণ রাস্তাগুলোর পাশে পুকুর খননের সময় রাস্তাকে পুকুরের পাড় হিসেবে ব্যবহার করছেন। এতে করে এসব রাস্তা পুকুরে ভেঙে যাওয়ায় পরবর্তী সময়ে সরকারি সংস্কার কাজে অধিক টাকা ব্যায় হচ্ছে। এ রকম রাস্তার সংলগ্ন পুকুরের সংখ্যাও কম নয় বলে জানিয়েছেন ওয়াশিন গ্রামের কৃষক আব্দুল মতি।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, পুকুর খনন করা এলাকায় ড্রাম ট্রাকে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মাটি পরিবহন, ত্রিপল ব্যবহার না করায় মাটি পড়ে এলাকার পাকা রাস্তাঘাটের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি ও শিশির পড়লে ওইসব রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এছাড়া সরকারি রাস্তার পাশে খাল দখল করে পুকুর করায় ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মাঠে বর্ষা মৌসুমে পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ হওয়ায় জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এতে চলতি বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি মাঠের প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে রবিশস্য আবাদ করা সম্ভব হয়নি।

পুকুর খনন প্রসঙ্গে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, তাড়াশে যেসব কৃষক তাদের নিজের জমিতে পুকুর খনন করছেন তা সবই উর্বর ফসলি জমি। এসব জমিতে বোরো, আমন, সরিষার নিবিড় আবাদ হয়ে থাকে। সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তাড়াশ উপজেলায়। এখানে পুকুর খননের ফলে মাছের চাষ বৃদ্ধি পেলেও আশঙ্কাজনকভাবে ধানি জমির পরিমাণ কমছে।

ফসলি জমিতে পুকুর খনন প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইফ্ফাত জাহান জানান, অনুমতি ছাড়া যেকোনো ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আর পুকুর খনন বন্ধে নিয়মিত অভিযান ও মাইকিং করা হচ্ছে। তবে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top