ঢাকা শনিবার, ১২ই অক্টোবর ২০২৪, ২৮শে আশ্বিন ১৪৩১


ফরিদপুরে ধান চাষে বিমুখ কৃষক, কমেছে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ


প্রকাশিত:
২১ জানুয়ারী ২০২০ ০৪:৩৫

আপডেট:
১২ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:১২

ফাইল ছবি

পরিবেশ টিভি: বোরো ধানের আবাদ করে আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ে ফরিদপুর অঞ্চলের চাষিরা ধানের চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। গত নয় বছরে জেলার কৃষি বিভাগের আবাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ কমেছে।

আশানুরুপ মূল্য না পাওয়া, আর উৎপাদন খরচ অধিক হওয়ায় দিন দিন কমছে ধানের আবাদ। এখন বোরোর মৌসুমে চাষিরা ঝুঁকছে সরিষা, মসুর, পেঁয়াজ ও গম জাতীয় ফসলের দিকে।

ফরিদপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর জেলার নয়টি উপজেলায় ২০১০-১১ সালে জেলায় বোরো মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯ হাজার ৪১৭ হেক্টর, এর বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার ৬ হেক্টর। কিন্তু চলতি মৌসুমে (২০১৯-২০) বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে।

বোরো ধানের বদলে এবার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পেঁয়াজ ৯ হাজার হেক্টর, সরিষা ৩ হাজার হেক্টর, মসুর ৪ হাজার হাজার হেক্টর, আর গম প্রায় ৩ হাজার হেক্টর অতিরিক্ত চাষ হয়েছে।

ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত মৌসুমে তারা ধানের নায্যমূল্য পাননি। প্রতিমণ ধানের উৎপাদনে তাদের খরচ হয়েছে ৮শ টাকা। সেখানে প্রতি মণ বিক্রি করেছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। এ কারণে তারা বিকল্প ফসল চাষে ঝুঁকছেন। তবে সরকারিভাবে ধান ক্রয় শুরু হলেও প্রান্তিক চাষিরা সেখান থেকে কাঙ্খিত সুবিধা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তারা।

ফরিদপুর সদর উপজেলার সিএন্ডবি ঘাট এলাকার কৃষক হাফিজুর রহমান জানান, গত বছর আমি ছয় বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছিল ১৪ হাজার টাকা, কিন্তু ধান বিক্রি হয় ১০ হাজার টাকা। এ কারণে এ বছর ধান চাষ বাদ দিয়ে পেঁয়াজ, মসুর আর গম চাষ করছি।

বোরো চাষে ধ্বসের কারণ প্রসঙ্গে জেলা সদরের অম্বিকাপুর গ্রামের চাষী রব মোল্লা, আবুল হোসেন, সোলায়মান শেখ জানান, এ ধান চাষ শুধু সেচ নির্ভর। আর সেচ কাজে জ্বালানির দাম, শ্রমিক খরচ অধিক হওয়া, অন্যদিকে উৎপাদিত এ ধানের দাম কাঙ্খিত না পাওয়ায় এমনটি হয়েছে। তারা জানান, বোরো বাদ দিয়ে আমরা এখন অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছি।

জেলার বোয়ালমারী এলাকার ধান ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, এলসির মাধ্যমে চাল আসায় দেশের কৃষকরা প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া সরকার যখন ধান কিংবা চাল কেনে সেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মিলারদের কাছ থেকে, কৃষক সময় মতো সরাসরি দিতে পারে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকরা এমনিভাবেই বোরো ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকবে। তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, ধান চাষে কৃষকদের প্রতি আরও সদয় হতে হবে, প্রয়োজনে ভর্তূকি দিতে হবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, শস্য বহুমুখীকরণের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, এর ফলে গম, পেঁয়াজ, মসুরির মতো বিকল্প ফসলের চাষ বাড়ছে। তিনি বলেন, জেলায় বোরো উৎপাদন কম হলেও দেশের খাদ্য সংকট হবে না।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top