ঢাকা রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫শে ভাদ্র ১৪৩১


সুনামগঞ্জে গরুর খামারে ঘুরছে প্রান্তিক অর্থনীতির চাকা


প্রকাশিত:
৮ জুলাই ২০২৪ ১৭:৪৩

আপডেট:
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:২৬

সুনামগঞ্জে গরুর খামার বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। গরু লালন-পালন করে খামারিরাও লাভবান হচ্ছেন। জেলার প্রান্তিক অর্থনীতির চাকা ঘুরছে খামারের কারণে। জেলাজুড়ে এখন দেখা যাচ্ছে এমন সম্ভাবনাময় দৃশ্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, আঁকাবাঁকা মাটির রাস্তায় কৃষাণ-কৃষাণিরা একসঙ্গে দলবেঁধে বিভিন্ন রঙের গবাদিপশু নিয়ে মাঠের দিকে যাচ্ছেন । দিনভর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠের টাটকা ঘাস খায় গরু। এরপর সন্ধ্যার আগেই পশু খামারে নিয়ে যান খামারিরা। অল্প কষ্টে লাভ বেশি হওয়ায় জেলায় বাড়ছে পশুর খামারের সংখ্যা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৩৭৪৭ দশমিক ১৮ বর্গকিলোমিটার এই ভাটির জেলায় ধান, মাছ, সবজি উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। তার মধ্যে এখন নতুন মাত্রায় যোগ হয়েছে গরুর খামার। ফলে দ্রুত ভাগ্যবদল হচ্ছে খামারিদের।

যাদের খামার আছে, তারা খামার বড় করতে পারেননি। পরিধি বাড়াতে সরকারি সহযোগিতা অথবা সহজ শর্তে ঋণ দরকার। যেগুলো আমরা পাচ্ছি না। এই সুবিধাগুলো পেলে অনেক লাভবান হতাম।

খামারিদের মধ্যে একজন সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আবুল কালাম হিমেল ৷ ছাত্রজীবনেই পড়াশোনার পাশাপাশি ১০টি গরু দিয়ে শুরু করেছিলেন গরুর খামার। ২০২২ সালের বন্যায় তার খামারের দুটি গরু মারা গেলে আর্থিকভাবে লোকসানের মুখে পড়তে হয় তাকে। পুনরায় গরুর খামার দিয়ে সফল তিনি।

হিমেল জানান, যাদের খামার আছে, তারা খামার বড় করতে পারেননি। পরিধি বাড়াতে সরকারি সহযোগিতা অথবা সহজ শর্তে ঋণ দরকার। যেগুলো আমরা পাচ্ছি না। এ সুবিধাগুলো পেলে অনেক লাভবান হতাম।

কেবল হিমেল নন, হাওরে সুযোগ-সুবিধা ভালো থাকায় এই জেলার ১২ উপজেলায় প্রায় ৫৩৭টি গরুর খামার গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে গত এক বছরেই জেলায় অর্ধশতাধিকের ওপর গরুর খামার করা হয়েছে।

ফলে এই খামারগুলোতে একদিকে যেমন দুধ উৎপাদনের জন্য গাভি পালন করা হচ্ছে, অন্যদিকে মাংসের জন্য কিংবা কোরবানির জন্য গরু লালন-পালন করছেন খামারিরা। ফলে এই জেলায় দিন দিন খামারের সংখ্যা বাড়ায় বদলে যাওয়ার হাওয়া লেগেছে প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থনীতিতে।

তবে গো-খাদ্যসহ অন্য জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিতে কাঙ্ক্ষিত লাভের মুখ দেখছেন না এ অঞ্চলের খামারিরা।

খামারিদের যে পুঁজি সংকট রয়েছে সেটা নিরসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। ব্যাংক থেকেও খামারিরা যেন সহজ শর্তে ঋণ পায় সেজন্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।—জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম

খামারিরা জানান, গরুর খামার করতে অনেক টাকা দরকার। কিন্তু খামারিদের সরকারি সহায়তা ও সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হয় না। তাই জেলায় খামারের সংখ্যা খুব একটা বাড়েনি। সেইসঙ্গে যারা খামার করেছেন তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, হাওর অঞ্চলে গরুর খামার বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত খামারিদের পরামর্শ ও সেবা দেওয়া হচ্ছে। খামারিদের যে পুঁজি সংকট রয়েছে সেটা নিরসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। ব্যাংক থেকেও খামারিরা যেন সহজ শর্তে ঋণ পায় সেজন্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আগামী বছর ঈদুল আজহায় সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার এসব খামারের প্রায় ৫৫ কোটি ৫১ লাখ টাকার গরু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top