ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

সাজেক রক্ষায় প্রয়োজন গুরুত্বপূর্ণ সাত পদক্ষেপ


প্রকাশিত:
১০ জানুয়ারী ২০২১ ২৩:০৮

আপডেট:
১০ জানুয়ারী ২০২১ ২৩:১০

সাজেক ভ্যালি

 

দিন দিন সাজেক ভ্যালির পর্যটক বাড়ছে অনলাইনের বদৌলতে। সাজেকের লোভাতুর সৌন্দর্য্যের টানে সবাই ছুটছে দূর-দূরান্ত থেকে পাহাড়ের পথে। উচু উচু পাহাড়, মেঘ আর আকাশের মিতালী দেখতে নানান ধর্ম-বর্ণের মানুষের মিতালী সম্ভব হয়েছে পার্বত্য অঞ্চলে। দূর্গম সব পার্বত্য অঞ্চল ও পাহাড়ী জীবন জীবিকা সম্পর্কে জানতে বইয়ের পাতা থেকে এখন স্বচক্ষে দেখার সুযোগ সাজেকে করে দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এর ফলে এখানকার পাহড়ীদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে।
তবে এর পাশাপাশি প্রকৃতি হারাচ্ছে তার নিজস্ব রূপ-সৌন্দর্য্য। কিন্তু কেন? যে রূপকে ধারণ করে পাহাড় টানছে পর্যটক, যে সৌন্দর্য্যমণ্ডিত সম্পদকে পুঁজি করে পার্বত্য অঞ্চল ও পাহাড়িরা দেখছে জীবন যাত্রার উন্নয়নের স্বপ্ন, ঠিক সেই একই কারণে পাহাড় তার রূপ-সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে অবহেলায়, বে-খেয়ালে।
পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলায় পাহাড়িদের অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্র বেড়েছে। যা স্থানীয় পাহাড়িদের কাছ থেকেই জানা গেছে। আসলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে লালন করেই তো দেশ-বিদেশে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠে। আর সেই পর্যটন কন্দ্রগুলোর সৌন্দর্য্য রক্ষায় উন্নত দেশেগুলো যথেষ্ট সচেতন থাকে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেই চিত্র ভিন্ন। কারণ, এদেশে যতোখানি সুন্দর উদ্যোগ নিয়ে রুচিশীল পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়, ঠিক তার সামান্যতম উদ্যোগ অব্যাহত থাকে না সৌন্দর্য্য রাক্ষার চেষ্টায়।
এদেশের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট বলতে এখনও সাজেক-কেই বোঝেন অনেকে। এর রূপের মোহে মানুষ ছুটে আসছে দূর-দূরান্ত থেকে। কিন্তু সেই রূপ-সৌন্দর্য্য এখন হারাচ্ছে দিনে দিনে। এক্ষেত্রে দুই শ্রেণীর অবহেলাই প্রধাণত দায়ী। প্রথমত, পর্যটকদের রুচশীল ও পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গির অভাব। দ্বিতীয়ত, কর্তৃপক্ষের বেখেয়ালী মনোভাব।

প্রথমত, একটি স্লোগান পর্যটকদের ভ্রমণের পূর্বেই মাথায় রাখা উচিৎ- “সৌন্দর্য উপভোগে করে ভ্রমণ, করবো না'কো পরিবেশের সৌন্দর্য্য হরণ”। আর কর্তৃপক্ষের উচিৎ পর্যটকরা যাতে পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করার সুযোগ না পায়, সেক্ষেত্রে বাধা প্রদানের চেষ্টা অব্যাহত রাখা।

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহ:
১. সাজেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাস্টবিন স্থাপন করা।
২. পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ করা উচিৎ, যারা সার্বক্ষণিকভাবে সেখানে কাজে নিয়োজিত থাকবে।
৩. পরিচ্ছন্ন কর্মীরা দিনে কমপক্ষে দুই শিফটে নিয়োজিত থাকবে এবং প্রত্যেকের হাতে একটি ঝাড়ু এবং একটি বেলচা থাকবে, যাতে তারা পর্যটকদের নিক্ষিপ্ত পরিত্যক্ত আবর্জনা, প্লাস্টিক বোতল সাথে সাথে উঠিয়ে ডাস্টবিনে ফেলতে পারে। এতে পর্যটকদের লজ্জাবোধও তৈরী হবে। (এই ব্যবস্থা সৌদি আরবের মক্কা-মদিনা শহরে রয়েছে।)
৪. পরিচ্ছন্ন কর্মীদেরকে প্রতিটি ছোট ছোট কাজের এরিয়া ভাগ করে দেয়া, যাতে অল্প পরিশ্রমে স্পটগুলো সহজেই সার্বক্ষণিকভাবে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারে।
৫. পরিচ্ছন্ন কর্মীদের কাজে জবাবদিহিতার জন্য একজন পরিচালক থাকবে।
৬. সাজেকের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে অর্থায়নের জন্য সেখানকার দোকান, রিসোর্ট, হোটেল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক নির্দিষ্ট হারে চাঁদা বা ফী আদায়।
৭. পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে সাজেকে ঢোকার আগে পরিচ্ছন্নতামূলক বিলবোর্ড বসানো।

পাহাড়ের পরিচ্ছন্নতা স্বাভাবিক রাখতে পারলে সাজেকের এই পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলাটা সার্থকতা পাবে।
এতে অব্যাহত থাকবে পাহাড়ের রূপ-সৌন্দর্য্য। পাশাপাশি অব্যাহত থাকবে পর্যটকদের ভীড়, ফলে অব্যাহত থাকবে এখানকার জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন।

আর পর্যটকদের মনে রাখতে হবে- আপনি যে সৌন্দর্যের লোভে ভ্রমণ করতে যাচ্ছেন এতো কষ্ট করে, সেই সৌন্দর্য যাতে নষ্ট না হয় আপনার এমন কোনও আচরণে। সেদিকে জোর লক্ষ্য রাখা। তাহলেই ভ্রমণ ও পরিদর্শন যেমন হবে আনন্দময়, তেমনি পরিচ্ছন্ন পরিবেশে পাহাড়ে বৃদ্ধি পাবে তার নয়নাভিরাম রূপ-সৌন্দর্য্য। অটুট থাকবে আপন গৌরব।

লেখক-
মোহাম্মদ হাফিজ
(সাংবাদিক, লেখক ও ভ্রমণপিপাসু)

 




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top