ঢাকা শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

বাইক্কাবিলে এবার প্রজাতি বাড়লেও কমেছে পাখি


প্রকাশিত:
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:০৫

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০৬

ফাইল ছবি

পরিবেশ টিভি: প্রতিবছরের মতো এবারও অতিথি পাখিদের সমাগম ঘটেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের বাইক্কাবিলে। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এসেছে এরা। নানা জাত, রঙ-বেরঙের পাখির ওড়াওড়ি, খুনসুঁটি, স্বচ্ছ পানিতে ডুব-সাঁতার খেলা এসব দেখে চোখ জুড়াচ্ছেন দেশি ও বিদেশি পর্যটকরা। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর কমেছে পাখির উপস্থিতি। তবে বেড়েছে প্রজাতি।

২০০৩ সালে হাইল হাওরের প্রায় ১২০ একরের বাইক্কাবিলকে অভয়াশ্রম ঘোষণার শুরু থেকেই বাইক্কাবিলের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করে

আসছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বড় গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন’। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, গত কয়েক বছরের তুলনায় এই বছর পাখির সংখ্যা কমেছে মারাত্মকভাবে। যার জন্য প্রধানত দুটি কারণকে দায়ী করছে সংগঠনটি। জলজ বন কমে যাওয়া এবং শীত কম থাকা। সেসঙ্গে বাইক্কাবিলের ভেতরে পাখি শিকার বন্ধ থাকলেও হাইল হাওরের বিশাল এলাকায় জনবল সঙ্কটের কারণে বন্ধ করা যাচ্ছে না পাখি শিকার। প্রতি রাতেই বিষটোপ এবং বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহার করে নতুন নতুন পদ্ধতিতে পাখি শিকার করছে শিকারিরা।

সংগঠনের সভাপতি আবদুস সোবান চৌধুরী জানান, পরিযায়ী পাখিদের বড় একটি অংশ পানিফল, হেলেঞ্চা, বল্লুয়া, চাল্লিয়া ইত্যাদিসহ পদ্মপাতাকে ঘিরে বসবাস করে এবং এসব জলজ বন থেকে নানা ধরনের উদ্ভিদ এবং পোকা খেতে তারা পছন্দ করে। কিন্তু গত বর্ষায় প্রচুর পরিমাণ কচুরিপানা থাকায় পানির নিচে থাকা জলজ বন নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে জলচর পাখিদের সংখ্যা কমে এসেছে।

সরেজমিন বাইক্কাবিল ঘুরে দেখা যায়, ওয়াচ টাওয়ারের বাম পাশের কিছু অংশ ছাড়া বিশাল অংশে জলজ বন নেই। জলজ বন কমে গেছে অন্তত ৫০ শতাংশ। গত বছর বাইক্কাবিলে ৩৯ প্রজাতির পাখির দেখা মিললেও এ বছর ৭০ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে। বাইক্কাবিলে পাখির ছবি তুলতে আসা ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার সামিয়াত জামান খান জিকো জানান, প্রতিবছর এই মৌসুমে পাখির ছবি তুলতে আমি বাইক্কাবিলে আসি। এ বছর পাখির উপস্থিতি অন্যান্য বছর থেকে অনেক কম। তবে বেশি প্রজাতির পাখির দেখা পেয়েছি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজসরালি, সরালি, বালিহাঁস, পাতি তিলি হাঁস, মরচে রঙ ভূতিহাঁস, গিরিয়া হাঁস, পিয়ং হাঁস, গয়ার-সাপপাখি, পাতিকুট, পাতি পানমুরগি, বেগুনি-কালেম, পানকৌড়ি, কানিবক, ডাহুক, জলময়ূর, ছোট ডুবুরি, ধলাবক, বেগুনি বক, ধুপনি বক, মাছরাঙ্গা, গোবক, লাল ফিদ্দা, বড় গুটি ঈগল, পুবের পানকাপাসি, পালাসি কুরাঈগল, শঙ্খচিল, প্রায় ৫-৭ প্রজাতির ফুটকি, কালা লেজ জৌরালি, তিলা লালপা, বিল বাটান, গেওয়ালা বাটান, কালাপাখ ঠেঙ্গি, লাল লতিকা টিটি, মেটেমাথা-টিটি, রাঙাচ্যাগা, ইত্যাদি।

পাখি শিকারের বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ) আবদুল ওয়াদুদ জানান, পাখিদের যেন কেউ শিকার করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা অতিরিক্ত সতর্ক আছি। তবে আমাদের জনবল দিয়ে বিশাল এলাকা পাহারা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সাধারণ জনগণ সচেতন হলে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহ্বায়ক আ স ম সালেহ সুয়েল জানান, নিয়ম না মেনে বাইক্কা বিলের আশপাশে তৈরি করা হচ্ছে ফিশারি। যার কারণে উদ্ভিদ ও জলজ বৈচিত্র্য নেই। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে এই স্থানটিকে নিরাপদ রাখতে পারলে সারা বছর এখানে পাখি থাকবে।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top