ক্ষতিকর ভারি ধাতু লাল শাকে বেশি, লিচুতে কীটনাশক
এক গবেষণায় সবজিতে ক্ষতিকর ভারি ধাতু ও ফলমূলে কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
শাকসবিজর মধ্যে লাল শাকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর মাত্রার ভারি ধাতুর উপস্থিতি মিলেছে। আর ফলের মধ্যে লিচুতে কীনটনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়া বেশি।
সোমবার কর্তৃপক্ষের প্রশিক্ষণ কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, অনুষ্ঠানে ফল সম্পর্কিত গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন প্রধান।
তিনি ও তার গবেষক দল আম, লিচু, বরই ও পেয়ারার ৮০টি করে মোট ৩২০টি নমুনা পরীক্ষা করেন।
এর মধ্যে তারা ৩৯টি নমুনায় কীটনাশকের অবশিষ্টাংশের উপস্থিতি খুঁজে পান, যা মোট নমুনার ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে লিচুতে, ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম পাওয়া গেছে আমে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ।
ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া থেকে এসব ফলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
কীটনাশকযুক্ত নমুনার মধ্যে সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার (এমআরএল) চেয়ে অতিরিক্ত পাওয়া যায় ৩০টি নমুনায়।
এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য গবেষক দল কৃষকদের নিয়মিত মনিটরিং, উত্তম কৃষি চর্চার উপর জোর দেয়া, কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর উপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
অন্যদিকে সবজিতে রাসায়নিক ভারি ধাতুর উপস্থিতি এবং এর মাত্রা নিয়ে গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া। তারা ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৬ জেলা থেকে মোট ৯ ধরনের সবজি সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে ছিল আলু, বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো, লালশাক, পটল, বাঁধাকপি, শসা ও মটরশুটি।
এসব সবজিতে লেড (সীসা), ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়ামসহ বেশ কয়েকটি ভারি ধাতুর উচ্চমাত্রার উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর মাত্রায় ভারি ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে লাল শাকে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, লাল শাকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যাডমিয়ামের মতো ভারি ধাতু পাওয়া গেছে। যেখানে ক্যাডমিয়ামের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা প্রতি কেজিতে ১৯০ মাইক্রোগ্রাম, সেখানে লাল শাকে পাওয়া গেছে প্রতি কেজিতে ৭০৪ দশমিক ৩২ মাইক্রোগ্রাম।
বেগুনে পাওয়া গেছে প্রতি কেজিতে ২৭৫ দশমিক ৬৬ মাইক্রোগ্রাম, ঢেঁড়সে ৩৪৯ মাইক্রোগ্রাম ও টমেটোতে প্রতি কেজিতে ১৯৫ মাইক্রোগ্রাম ক্যাডমিয়াম।
আর ক্রোমিয়ামের মতো ভারি ধাতুর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে শিম, শসা, ঢেঁড়স, পটল ও লাল শাকে। সীসার মতো ভারি ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে বেগুন, বাঁধাকপি, শিম, শসা, ঢেঁড়স, পটল, টমেটো ও লাল শাকে। অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছের বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো ও লাল শাকে।
গবেষকরা বলছেন, যেসব সবজিতে ভারি ধাতু রয়েছে; সেগুলো দীর্ঘদিন খেলে ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারী ধাতু দ্বারা দূষিত সবজি সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করা হয় নারায়ণগঞ্জে; এর মধ্যে আর্সেনিক দ্বারা দূষিত সবজি সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করা হয় শেরপুরে।
ক্যাডমিয়ামের ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন নারীরা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: