ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


ভাঙন আতঙ্কে পদ্মাপাড়ের ২০০ পরিবার


প্রকাশিত:
২৪ মে ২০২২ ০৯:৪৮

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ১৬:৩৩

 

নদীর পানি বৃদ্ধি, প্রচণ্ড স্রোত ও ঢেউয়ের আঘাতে নদীর কূল ভেঙে যাওয়ায় নদীপাড়ের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ক্রমশ ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় লোকজন বাড়িঘর সরিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন।



রোব ও সোমবার দুপুরে ভাঙনপ্রবণ এলাকা দুটির মধ্যে নওপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় হোসেন মোল্লা ও মিঠু মোল্লা তাদের কয়েক শ বছরের ভিটেমাটি ভেঙে যাওয়ায় বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

স্থানীয় ফরিদ মাঝি বলেন, তিন দশক ধরে দেখছি, প্রতিবছর গ্রামের পর গ্রাম পদ্মায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গৃহবধূ ফাতেমা বেগম জানান, ১৭ বছর আগে বিয়ে হয়েছে। তখন আশপাশে নদী দেখিনি। এখন নদীর প্রতিটি ঢেউ কানে বাজে। ঘরবাড়ি ভাঙনের ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। মনে হয়, এই বুঝি পদ্মায় গিলে খাবে ঘরবাড়ি। আমরা দ্রুত এ ভাঙনের স্থায়ী সমাধান চাই।

 

ভিটেমাটি ভাঙনের মুখে থাকা সিংহেরহাটি গ্রামের স্থানীয় দানেশ মোল্লা জানান, এক সপ্তাহ ধরে পদ্মা নদীতে বর্ষার পানি বাড়ছে। এর সাথে নদীতে স্রোত ও ঢেউও বেড়েছে। এর ফলে তার বাড়ির নদীর পাশের সীমানার ১০০ মিটার জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বসতভিটা রক্ষা করতে মানুষের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন তিনি। সে টাকায় বাঁশ, বালু, বস্তা কিনেছেন। এখন বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন আটকানোর চেষ্টা করছেন।

একই এলাকার মোস্তফা কামাল বলেন, এক সময় নদী আমাদের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ছিল। পদ্মার ক্রমাগত ভাঙনে একেবারে ঘরের সামনে এসে নদী ঠেকেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আশায় ছিলাম আমাদের এখানে স্থায়ী বাঁধ হলে ভাঙন বন্ধ হবে। শুনেছি আমাদের গ্রামের দু’পাশে বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের বাড়ির অংশ বাঁধের মধ্যে পড়েনি।

মাত্র পাঁচ দিন আগে (১৮ মে) উপজেলার হাড়িদিয়ায় পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। বাঁধ নির্মাণ নিয়ে উপজেলাবাসীদের মধ্যে যখন আনন্দের বন্যা বইছে, ঠিক তখনই নদী ভাঙন দেখা দেওয়ায় আবার হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।

খবর পেয়ে ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল আউয়াল ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ইউএনও আব্দুল আউয়াল জানান, ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।

এছাড়া গত বুধবার লৌহজং-টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় ৪৪৬ কোটি টাকার স্থানীয় বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। এ প্রকল্পে লৌহজং উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ৪টি গ্রামের ৯ হাজার ১০০ মিটার নদী তীরবর্তী এলাকায় বাঁধের কাজ হবে। সেখানে প্রথমে জিও ব্যাগ ফেলে ফাউন্ডেশন করা হচ্ছে। তারপর পাথর (ব্লক) ফেলে বাঁধ দেওয়া হবে।

স্থায়ী বাঁধের বিষয়ে তিনি বলেন, কনকসার ইউনিয়নের সিংহেরহাটি ও বড় নওপাড়া গ্রাম দুটি ভাঙনপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত না হওয়ায় বাঁধ নির্মাণের আওতায় আনা হয়নি। তবে এ দুগ্রামের অন্য পাশের বাঁধ টিকিয়ে রাখতে এখানেও বাঁধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তিনি এখানে অস্থায়ী ভাঙন রোধে দু-একদিনের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলার আশ্বাস দেন।


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top