বন্যা ও ভূমিধস : চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে সেনা মোতায়েন

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দুই জেলার প্রচুর মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন, পাশাপাশি এখানে ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ দুই জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ৮ আগস্ট, মঙ্গলবার সকালে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
আইএসপিআর জানায়, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতি ও ভূমিধস মোকাবিলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়াও, জলাবদ্ধতার কারণে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগরের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আরো দু’দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
টানা ৫ দিন ধরে প্রবল বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের নিচু এলাকা এখনও পানির নিচে। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। জলাবদ্ধতার কারণে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগরের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আরো দু’দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ৩০ বছরের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের নতুন রেকর্ড হয়েছে গত রোববার। এ ছাড়া চলতি মাসে যেখানে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ছিল ৫৩০ দশমিক ৬ মিলিমিটার, সেখানে প্রথম ছয়দিনেই হয়েছে ৫ শ’ ৫০ মিলিমিটারের বেশি। অতিবৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পূর্ণিমার প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত তিনফুট উঁচু জোয়ার।
টানা বর্ষণে একের পর এক ডুবছে উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের রেলপথ ও সড়ক পথ। ডুবে গেছে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, হাটহাজারী, রাউজানসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ওইসব এলাকার লাখো মানুষ। এছাড়া একাধিক স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনাও ঘটেছে।
এদিকে, সোমবার দুপুরে অতিবৃষ্টিতে বান্দরবান সদরে পাহাড়ধসে একই পরিবারের মা-মেয়ে নিহত হয়েছেন। নিহতরা পৌরসভার কালাঘাটা গোধার পাড় এলাকার বাশি শীলের স্ত্রী ও মেয়ে।
বৃষ্টিতে বান্দরবান-থানচি সড়কের ১২ মাইল এলাকায় পাহাড়ধসে সড়কে গাছ পড়ে বিচ্ছিন্ন রয়েছে শহর থেকে রুমা-থানচি যোগাযোগ ।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বান্দরবান সদর, রুমা, আলীকদমসহ জেলার বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে।
আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মাতামুহুরী নদীর পানিতে চৈক্ষ্যং ইউপি পরিষদ এলাকার সড়ক প্লাবিত হয়ে আলীকদমে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।’
বান্দরবান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বান্দরবান শহরের অর্ধেক অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। বান্দরবানের আশপাশের এলাকা যেমন: ক্যামলং, মাঘমারা, বালাঘাটা, ক্যচিংঘাটা, তংপ্রু পাড়া, ধোপাছড়াসহ অনেক এলাকার জনসাধারণ এখন পানির দুর্ভোগের মধ্যে আছে।’
দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৯২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট কতজন আশ্রয় নিয়েছেন, তার সঠিক হিসাব জানা যায়নি।
সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ৩৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বান্দরবানে। বৃষ্টিপাত এখনও অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে খাগড়াছড়ি ভারি বর্ষণের কারণে দীঘিনালার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাঙামাটির লংগদুর সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় ছয় শতাধিক মানুষ। জেলায় ১৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন জায়গায় ২ শতাধিক স্থানে পাহাড়ধস হয়েছে। এ ছাড়াও লংগদু, নানিয়াচর, রাঙামাটি সদরের কুতুকছড়ি নিম্ন এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। রাঙামাটি শহরের ৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ শতাধিক লোক আশ্রয় নিয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: