ঢাকা সোমবার, ৩১শে মার্চ ২০২৫, ১৮ই চৈত্র ১৪৩১

বন্যাকবলিত মানুষদের সুস্থ থাকতে যা করতে হবে


প্রকাশিত:
২২ আগস্ট ২০২৪ ১৮:৫৯

আপডেট:
৩১ মার্চ ২০২৫ ০৯:১৭

বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, কালবৈশাখী, টর্নেডো, তুফান ও নদীভাঙনের সঙ্গে এ দেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে পরিচিত। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক ও বন্যাপ্রবণ অঞ্চল। তাই যে কোনো সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে পারে এ দেশের মানুষ।

বর্তমানে টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে প্লাবিত চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার ও লক্ষ্মীপুর, ফেনী, পটুয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেটসহ আরও অনেক জেলা। এতে বন্যা ও জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। পরিবার নিয়ে ঝুঁকিতে আছেন বন্যাকবলিত এলাকার পানিবন্দি মানুষ। ফলে বন্যাকবলিত এলাকার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।

বন্যার কারণে গাছপালার পাশাপাশি মানুষের ঘরবাড়িও ভেসে চলে যায়। মানুষের আবাসস্থলে ঢুকে পড়ে পানি। এতে দূষিত পানির মাধ্যমে রোগজীবাণু বন্যাকবলিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্ট চিকিৎসক ডা. প্রদীপ্ত চৌধুরী বলেন, ‘বন্যাসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য ব্যবহার করা। বন্যার সময় পানির প্রায় সকল উৎস দূষিত হয়ে যায়। এ সময় একদিকে যেমন থাকে না বিদ্যুৎ সরবরাহ, অন্যদিকে আগুন জ্বালানোরও ব্যবস্থা থাকে না। তাই সহজে তৈরি ও সংরক্ষণ করা যায়, এমন শুকনা খাবার যেমন: চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট হাতের কাছে রাখা ভালো। এ ক্ষেত্রে পানি ফোটানোর ব্যবস্থা না থাকলে প্রতি দেড় লিটার খাওয়ার পানিতে ৭.৫ মিলিগ্রাম হ্যালোজেন ট্যাবলেট (হ্যালো ট্যাব), তিন লিটার পানিতে ১৫ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট এবং ১০ লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা রেখে দিলে পানি বিশুদ্ধ হয়ে হবে।’

বন্যার সময় পয়োঃনিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ ও পশুপাখির মলমূত্র পানির সঙ্গে মিশে যায়। এতে বিভিন্ন ধানের রোগের প্রার্দুভাব বাড়তে থাকে। এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশু, বৃদ্ধ আর গর্ভবতী নারীরা। এ সময় শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতীদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। বিশেষ করে তারা যেন পানিতে না পড়ে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

ডা. প্রদীপ্ত চৌধুরী মনে করেন, বন্যার দূষিত পানির কারণে পানিবাহিত রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। এ সময় আর্দ্র আবহাওয়ায় ফাঙ্গাসের বংশবিস্তার ঘটে। তাই যারা অ্যালার্জি ও হাঁপানিতে আক্রান্ত, তাদের শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগের মাত্রা বেড়ে যায়। বন্যার পানির সংস্পর্শে বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সংক্রমণ, যেমন: দাউদ, খোস-পাঁচড়া, চুলকানিসহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চর্মরোগ দেখা দিলে অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা করুন।

ডা. প্রদীপ্ত চৌধুরীর মতে, এ সময় ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে খাওয়ার স্যালাইন বা ওআরএস দিন। স্যালাইন বানানোর জন্য অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করুন। পাশাপাশি ভাতের মাড়, চিঁড়ার পানি ও ডাবের পানি খাওয়াতে পারেন। এ ছাড়া বৃষ্টি, ঝড়, বন্যার কারণে ঠান্ডা লেগে অনেকসময় কফ-কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর প্রভৃতি হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top