‘রেমালে’ এ পর্যন্ত নিহত ১০, ক্ষতিগ্রস্ত ৩৭,৫৮০০০ মানুষ

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গতকাল রবিবার থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেই সঙ্গে হচ্ছে তীব্র ঝড়ো হাওয়া। উপকূলে জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। ঝড়ে ভেঙে পড়ছে ঘরবাড়ি ও গাছপালা। বেশ কয়েকটি জেলা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা থেকে সোমবার (২৭ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত বরিশাল, ভোলা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম ও খুলনায় মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো।
ভোলা: জেলায় সোমবার ভোররাতের দিকে নারী, শিশুসহ তিনজনের ঘর চাপায় মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন লালমোহন, দৌলতখান ও বোরহান উদ্দিন উপজেলার বাসিন্দা। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বাসস’কে বলেন, গতরাতে লালমোহন উপজেলার চরউমেদ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তীব্র বাতাসে ঘর চাপায় মনেজা খাতুন মারা যান। এছাড়া একই সময় দৌলতখান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে ঘরের উপর গাছ চাপায় মাইশা (৪) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। বোরহান উদ্দিন উপজেলার সাচরা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বাগানবাড়ি গ্রামের জাহাঙ্গীর (৫০) এর মৃত্যু হয় ঘরের উপর গাছ চাপা পড়ে। নিহত প্রত্যেক পরিবারকে সরকারিভাবে ২৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হবে।
পটুয়াখালী: জেলায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের সোমবার সকাল ৮ টার দিকে দুইজন গাছ চাপায় নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন জয়নাল হাওলাদার (৭০) ও করিম(৬৫)।
চট্টগ্রাম: আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদের চন্দ্রনগর কলাবাগানে নির্মাণাধীন ভবনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেয়াল ধসে পড়ায় সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬) নামে এক যুবক প্রাণ হারিয়েছে।
সাতক্ষীরা: গতকাল রাত ৮টার দিকে নাপিতখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় হোচট খেয়ে পড়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শওকত আলী মোড়ল (৭২) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনায়: গতকাল রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়ার পর সোমবার সকালে বটিয়াঘাটার বাসায় ফিরে যাবার সময় গাছচাপায় মৃত্যু হয় লাল চাঁদ মোড়লের (৩৬) ।
বরিশাল: বরিশাল নগরীর রুপাতলী বাস স্ট্যান্ড এলাকায় বহুতল ভবনের ছাদের দেয়ালের অংশ পাশের টিনশেড খাবার হোটেলের ওপর ধসে পড়ে। এতে নিহত হয়েছেন হোটেল মালিক লোকমান হোসেন ও কর্মচারী মোকছেদুর রহমান। সোমবার (২৭ মে) ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে নগরীর রুপাতলী বাস স্ট্যান্ড এলাকার লিলি পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
এদিকে সোমবার (২৭ মে) সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান জানান, রেমালের ধাক্কায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি। সঙ্গে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯০০ ঘরবাড়ি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার জন্য ৬ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ টি জেলায় জিআর হিসেবে ৩ কোটি ৮৫ লাখ নগদ টাকা, পাঁচ হাজার পাঁচশ মেট্রিক টন চাল ও পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশুখাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা সহযোগিতা করা হয়েছে। এসব সহযোগিতা ক্ষতিগ্রস্তদের মোবাইল অ্যাকাউন্টে যাবে।
মহিবুর রহমান আরও জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ৯ হাজার ৪২৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে বা স্থায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: