বিশ্বের সবচেয়ে দামি আমের চাষ বাড়ছে বাংলাদেশে, উৎপাদনও ভালো
জাপানি শব্দ “মিয়াজাকি”, যার অর্থ “সূর্যডিম”। মিয়াজাকি একটি আমের নাম। সাধারণ কোনো আম নয়, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। এই আমের রং সূর্যের মতোই রক্তিম, আবার আকৃতি ডিমের মতো; সব মিলিয়ে সূর্যডিম। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেই গত বছর এই আমের কেজি আড়াই লাখ রুপিতেও বিক্রি হয়েছে।
মিয়াজাকি অ্যাগ্রিকালচারাল ইকোনমিক ফেডারেশনের হিসাব অনুযায়ী, জাপানের সূর্যডিম বা মিয়াজাকি বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। জাপানে ২০১৯ সালে এক জোড়া মিয়াজাকির দাম উঠেছিল প্রায় ৫,০০০ ডলার, অর্থাৎ চার লাখ টাকার বেশি।
জাপানে মেইজি যুগ হিসেবে ধরা হয় ১৮৬৮ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত সময়কে। এ সময়টায় জাপান বিচ্ছিন্ন সামন্ততান্ত্রিক অবস্থান থেকে সরে এসেছিল। এই সময়েই এ আমের উদ্ভব হয়। তবে এর চাষ বেশি করে শুরু হয় গত শতকের সত্তরের দশকে।
মাখনের মতো মোলায়েম, সুগন্ধ আর রসে ভরপুর হওয়ার জন্য এ আমের এত কদর। বর্তমানে বাংলাদেশেও এই আমের চাষ হচ্ছে। শখের বশে অনেকে এ আমের চারা জাপান থেকে এনে লাগিয়েছিলেন।
ধীরে ধীরে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়ছে। বাংলাদেশে শুরুর দিকে প্রতি কেজি আম ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। গত বছর অনেক খামারি ২,০০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এর কমেও কেউ কেউ বিক্রি করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের “বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের” তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ ২৫ টন মিয়াজাকি উৎপাদিত হয়েছে।
তার আগের বছর হয়েছিল ২৪ টন। বাংলাদেশে এ আম আসার পর এবার সর্বোচ্চ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। মাঠ পর্যায়েও এ আমের ভালো উৎপাদনের চিত্র পাওয়া গেছে।
দিনাজপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মো. এজামুল হক বলেন, “মিয়াজাকির ফলন যেমন বাড়ছে, তেমনি এর সঙ্গে বাড়ছে জনপ্রিয়তা। এবার এ পর্যন্ত অন্তত ২০০ চারা উৎপাদন ও বিতরণ হয়েছে। আগে এ আম নিয়ে এতটা আগ্রহ ছিল না।”
আম্রপালি আমের নামকরণ যেভাবে হলোআম্রপালি আমের নামকরণ যেভাবে হলো
বাংলাদেশের অন্য আমগুলোর তুলনায় মিয়াজাকির দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। তারপরও প্রতি কেজির দাম ১,০০০ থেকে ২,০০০ টাকা। বিশ্বে যে আমের দাম লাখ টাকার বেশি, সেটি এ দেশে এত কমে কীভাবে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষিবিদ এবং আম বিষয়ে একাধিক বইয়ের লেখক মৃত্যুঞ্জয় বলেছেন, “মিয়াজাকির উৎপাদনে আসলে যে যত্ন নেওয়ার দরকার হয়, তা আমাদের এখানে কিছুই প্রায় হয় না। আর অন্য আমের জাতের মধ্যেই এর উৎপাদন হয়। কিন্তু জাপানে বা অন্যত্র মিয়াজাকির জন্য আলাদা নেট হাউস তৈরি থাকে। একেকটি আমের জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। এতে কতটা আলো পড়ছে, কতটা পানি দরকার, তা মেপে মেপে দেওয়া হয়।”
মৃত্যুঞ্জয় রায় বলেন, “মিয়াজাকির মূল আকর্ষণ এর রং। বিশেষ যত্ন নিলেই এমন রং হয়। কিন্তু আমাদের এখানে সেই রংটাই তো হয় না।”
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: