ঢাকা শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


যমুনা চরে পিয়াজের ফলন নিয়ে আশাবাদী কৃষকেরা


প্রকাশিত:
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:১১

আপডেট:
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:১২

বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় যমুনায় জেগে ওঠা চরে পিয়াজের ভালো ফলনের আশায় রয়েছেন চাষিরা। উর্বর পলিমাটিযুক্ত জমিতে পিয়াজের বেশ ভালো ফলন হবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। যমুনার বিস্তীর্ণ চর এলাকায় এখন দেখা মিলছে পিয়াজের আবাদ। কৃষকরা বলছেন, আগে চরাঞ্চলে পিয়াজের আবাদ কম হতো। কিন্তু এখন বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে। তবে এবারে পিয়াজ চাষে খরচ হয়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশী।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এবার বগুড়া জেলায় পিয়াজ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫৪ মেট্রিকটন। এ পর্যন্ত জেলায় পিয়াজ রোপন করা হয়েছে ৩ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে। চারা রোপণ চলমান রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা সম্ভব হবে। এর আগে জেলায় ৮০৫ হেক্টর জমি থেকে আগাম জাতের পিয়াজ উত্তোলন হয়েছে।

জানা যায়, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর চর ছেয়ে গেছে সবুজ পিয়াজ গাছে। এলাকার শতাধিক কৃষক পিয়াজ চাষ করে আর্থিকভাবে সাফল্যের আশা করছেন। যমুনার পানি এবারে আগে নেমে যাওয়ায় চলতি মৌসুমে পিয়াজ রোপণ করা হয়েছে। বাজারে পিয়াজের সংকটের কারণে বেশি দামে পিয়াজ বিক্রি হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা অন্যান্য ফসলের চেয়ে পিয়াজ চাষে বেশি আগ্রহী। অনুকূল আবহাওয়া এবং রোগবালাই কম থাকায় এবারে পিয়াজের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চরের কৃষকরা। ভারতীয় পিয়াজের চেয়ে দেশি পিয়াজের গুণগতমান ভালো। তাই দাম বেশি পাওয়ার প্রত্যাশা চাষিদের। ন্যায্য বাজার মূল্যের নিশ্চয়তা পেলে চরে পিয়াজ চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

সাধারণত নভেম্বর মাস থেকে যমুনা নদীতে পানি কমে যাওয়া শুরু করে। তখন চরে কৃষকেরা পিয়াজ চাষের উপযোগী করে তোলার জন্য কাজে নেমে পড়েন। পৌষ মাস থেকে কৃষকরা চারা রোপণ শুরু করেন। আর চৈত্র মাস থেকে পিয়াজ তোলা শুরু করেন। চরে পিয়াজ চাষে বিঘাপ্রতি খরচ হয় ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ মণ পিয়াজ হয়। খরচবাদে প্রতিবিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাভের হিসাব গুনছেন কৃষকরা। দেড় থেকে দুই মাস পরেই পিয়াজ ঘরে তুলবেন চাষিরা। স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় পিয়াজের পরিচর্যা নিয়ে কর্মব্যস্ত তারা।
সারিয়াকান্দি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগে চরের জমি পড়ে থাকত। তেমন কোনো চাষাবাদ হতো না। এখন সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলছে। চলাঞ্চলে শতকরা প্রায় ২০ থেকে ২৫ ভাগ জমিতে পিয়াজের আবাদ হয়ে থাকে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে চরাঞ্চলের পিয়াজ। প্রতি বছরই ভাঙনের কারণে তিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চর জেগে উঠে। একসময় চরের জমি পড়ে থাকলেও এখন সেখানে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হচ্ছে।

সারিয়াকান্দি চরঘাগুয়া এলাকার কৃষক মইফুল ইসলাম জানান, আগে সারা বছর যমুনা নদীতে পানিপ্রবাহ থাকত। এখন শীত মৌসুমে নদীতে পানি থাকে না। বিশাল এলাকায় ধু ধু চর পড়েছে। তীরবর্তী ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষিরা এ চরে চাষাবাদ করেন। সেখানে পিয়াজসহ নানা জাতের ফসল চাষ করেন তারা।

তিনি আরও জানান, ভরা বর্ষায় এ চরে অনেক পলি জমে। সেই পলি পিয়াজ ক্ষেতে সার হিসেবে কাজ দেয়। পিয়াজ চাষে সার বেশি লাগে না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশাও করছেন তিনি। তিনি এবার তিন বিঘা জমিতে দেশী জাতের পেঁয়াজের আবাদ করেছেন।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে এবার বগুড়া জেলায় পিয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫৪ মেট্রিকটন। এ পর্যন্ত জেলায় পিয়াজ রোপন করা হয়েছে ৩ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে। চারা রোপণ চলমান রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা সম্ভব হবে। জেলায় স্থানীয়ভাবে ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ পিয়াজের চাহিদা পূরুণ হয়ে থাকে। বাকিটা আমদানির উপর নির্ভর করে।

তিনি আরও জানান, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী, হাটবাড়ী, ফাজিলপুর, তেলীগাড়ী, গওলাডাঙ্গা, মানিকদাইড়, আউচারপাড়া, কালাইহাটা, সবুজের পাড়া, চকরথিনাথ, দিঘাপাড়া, করনজাপাড়া, বনরপাড়া, কাজলা, ইউনিয়ন পুরোটায় এখন চর। জেগে ওঠা এসব চরে শীতকালীন সবজির পাশাপাশি প্রতি মৌসুমে চলছে ধান, মরিচ ও পাটের আবাদ। গত বছরের তুলনায় এ বছর পিয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। প্রত্যাশিত উৎপাদন পেলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য এলাকাতেও এই পিয়াজ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top