ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

তুয়ারী মারাইং ভ্রমণ


প্রকাশিত:
১৪ নভেম্বর ২০২১ ০৯:৩৫

আপডেট:
১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:২৭

গন্তব্য তুয়ারী মারাইং। সঙ্গী অদম্য দামালের দল দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ। খাগড়াছড়িগামী রাতের গাড়িতে চড়ে ভোরেই পৌঁছি। হেটেলে উঠে সাফসুতর হতে হতেই দীঘিনালা পথের বাহন মাহেন্দ্র প্রস্তুত। গাইড মিল্টন ত্রিপুরার নির্দেশনা মতে ছুটলাম। পথে ব্রেক দিয়ে পেটে কিছু দানাপানি ঢুকিয়ে নিই। সারাদিন কী পাব আর খাবো। তাই গরম গরম ভাত, ডিম, ভর্তা, ডাল দিয়েই সকালের নাশতা সেরে নিলাম। এরপর ছুটলাম পিচঢালা আঁকাবাঁকা পথে।

যেতে যেতে নয় মাইল ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে মাহেন্দ্র ঢুকে যায় ইট-সুরকির পথ মাইতুইপাড়ার দিকে। মনের ভেতর বেশ ভালোলাগা কাজ করতে থাকে। চারপাশ সুনসান নীরবতা ভর করা অরণ্য ঘেরা সরু পথ। আলহাজ মোস্তফা হাকিম বিদ্যা নিকেতন ছাড়িয়ে সীমানাপাড়ায় পৌঁছে গাড়ি ব্রেক। এবার শুরু ঢেউ খেলানো পাহাড়ে ট্র্যাকিং। মাথার উপর নীল আসমানজুড়ে শরৎ কালের শুভ্রতায় ছুটে চলছি। সঙ্গে জুমের ফসলের মন উদাস করা ঘ্রাণ।

চলার পথে ছোট্ট একটি জুমঘরে খানিকটা সময় জিরিয়ে নেওয়া। মাঝেমধ্যে দূর থেকে দৈত্যাকার গাছের ঘন অরণ্য দেখার মাঝে অদ্ভুদ অনুভূতি দোল দেয়। এরকমভাবে প্রায় ঘণ্টাখানেক হাইকিং-ট্র্যাকিং করার পর, এক বিশাল খাদের কিনারায় গিয়ে থামতে হয়। এবার চিকন চিকন বাঁশের ফাঁক গলে নামতে হবে। দেখতে এসেছি -দেখতেই হবে। তাই লতা-গুল্মের সাহায্যে নেমে যাই। নামলাম তো ঠিকই। কিন্তু এর পরের দৃশ্য আরও ভয়ঙ্কর। অনবরত পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় দেড়শ ফুট উপর হতে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি পাথর আর পাথর। ঝুম বর্ষায় এটাও হয়তো একটা ঝর্ণার রূপ ধারণ করে থাকে। ঠিক ওই জায়গাটা দিয়েই ১০/১২ ফুট নিচে নামতে হবে। একটু এদিক সেদিক হলেই সাইজ। কি আর করা। দুর্বার দে-ছুট বলে কথা। সঙ্গীদের সাহায্যে রশি বেয়ে নেমে পড়ি। সেইরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি। লিখে বুঝানো মুশকিল। বুঝতে হলে যেতে হবে মায়াবি প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঘেরা তুয়ারী মারাইং। প্রকৃতি যেমনি মায়াবি, ঠিক তেমনি আবার চরম প্রতিশোধ পরায়ন।

যাক সেসব গুরুগম্ভীর কথা। বরং বাকি অংশের ট্রেইল নিয়ে গল্প করি। তুয়ারী মারাইং ঝর্ণার দেখা পেতে আর খুব বেশি পথ ছিল না। যতটুকুনই ছিল শুধু পাথর আর পাথর। দুইপাশে খাড়া উঁচু পাহাড়। ওর মাঝ দিয়েই চলছিল আমাদের হাইকিং। প্রাচীন গাছগুলোর ডালপালা এমনভাবে একটা আরেকটার সঙ্গে জড়িয়েছিল যে কেউ প্রথম দেখায় ভুতুড়ে বাড়ির প্রান্তর মনে করে থাকবে। ভ্রমণান্দ ঠিক এই জায়গাটাতেই। যেতে যেতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঝর্ণার দেখা মিলে।

সুবহানাল্লাহ। তুয়ারী মারাইং ঝর্ণার রূপ দেখব নাকি এর পরিবেশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখব। কোনটা রেখে কোনটায় দৃষ্টি আটকাব। পুরাই অস্থির প্রকৃতি। প্রায় শতফিট উচ্চতা থেকে ঝর্ণার পানীয় ধারা পতনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। মন মাতানো অনবরত ছন্দতোলা রিমঝিম শব্দ। পানি পড়তে পড়তে ঝর্ণার সামনে খুব সুন্দর ক্যাসকেড তৈরি হয়েছে। যেখানে অবলীলায় সাঁতার কাটা যায়। ঝর্ণার ডান সাইডের পাহাড়ের পাদদেশটা চমৎকার আকৃতির। যেন বিশাল একটি থালা।

সম্ভবত এই কারণেই ঝর্ণার নামটা তুয়ারী মারাইং। তুয়ারী অর্থ কুয়া/কূপ আর মারাইং অর্থ থালা/বাসন। অর্থাৎ কুয়ার থালা। এটি একটি ত্রিপুরা ভাষার শব্দ। সব মিলিয়ে তুয়ারী মাইরাং ঝর্ণা ও এর পাহাড়ের পাদদেশের ভৌগোলিক আকৃতিসহ এর যাবার ট্রেইলটা অসাধারণ সৌন্দর্য বহন করে আছে। যে কোনো ভ্রমণপিপাসু তুয়ারী মারাইং দেখতে গিয়ে আমৃত্যু সুন্দর স্মৃতির ঝুলি নিয়ে ফিরতে পারবেন।

যাবেন কীভাবে: ঢাকা-খাগড়াছড়ি রুটে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস চলাচল করে থাকে। খাগড়াছড়ি বাসস্ট্যান্ড হতে চান্দের গাড়ি/মাহেন্দ্র/সিএনজিতে দীঘিনালা নয় মাইল এলাকার সীমানাপাড়া। মাইতুই বা সীমানাপাড়া হতে স্থানীয় গাইড পাওয়া যায়।

থাকবেন ও খাবেন কোথায়: খাগড়াছড়ি শহরে মানভেদে বিভিন্ন আবাসিক ও খাবার হোটেল রয়েছে। চাইলে তুয়ারী মারাইং দিনে দিনে দেখে রাতের গাড়িতে নিজ গন্তব্যে ফিরতে পারবেন।

সতর্কতা: অ্যাডভেঞ্জার ট্রাভেল করার উপযোগী রশি, শুকনো খাবার ও পর্যাপ্ত পানিসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে নেবেন।

-মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম 

সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর 


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top