আপত্তিতে বাঁচল সাড়ে ৩শ কোটি টাকা

অবশেষে যমুনা নদী ছোট করা থেকে পিছিয়ে এলো সরকার। ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় এই নদী ছোট করে সাড়ে ৬ কিলোমিটারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছিল পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
কিন্তু হাইকোর্টে রিটসহ নানা সমালোচনার মুখে আপাতত সেই সিদ্ধান্ত বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে যে প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে তার বিভিন্ন ব্যয় নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে খরচ কমানো হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকা। কিন্তু এখনো প্রায় ১৭ ধরনের পরামর্শক রয়েছে প্রকল্পে।
‘যমুনা নদী টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রকল্প-১ : নদীতীর সংরক্ষণ ও নদী শাসন’ প্রকল্পের আওতায় এসব ব্যয় করা হবে। এটি বাস্তবায়নে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া অনুদান দেবে এআইআইবি এবং নেদারল্যান্ডস সরকার। গত মঙ্গলবার প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
প্রকল্পটির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এ রকম প্রকল্পের প্রয়োজন আছে। ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে এ প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। পরিকল্পনা মতোই বাস্তবায়ন করা হবে। এসব নিয়ে বিরূপ চিন্তাভাবনা না করাই ভালো।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু গত ৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় বিভিন্ন ব্যয় নিয়ে আপত্তি জানায় পরিকল্পনা কমিশন। ফলে এখন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮৭৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১৮৭ কোটি ১১ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ ৫৭৩ কোটি এবং বৈদেশিক অনুদান থেকে ১১২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। চলতি বছর থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) একেএম ফজলুল হকের কাছে। শনিবার তিনি বলেন, এখানে নদী ছোট করার বিষয় নয়। এটা ভুল ধারণা। যমুনা নদী যেভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে এবং ভাঙনের ফলে ব্যাপক ক্ষতি করছে। সেটিকে একটা সেইফে নিয়ে আসা দরকার। এটি প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে দেখা যাবে।
তিনি বলেন, পিইসি সভায় আপত্তি দিয়ে সরকারের বাড়তি ব্যয় থেকে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা বাঁচানো হয়েছে। কিছু ব্যয় বাদ দেওয়া হলেও যেহেতু বিশ্বব্যাংকের স্বল্প সুদের ঋণ আছে সেহেতু থোক হিসাবে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া এটি পুরোটাই একটি গবেষণাধর্মী প্রকল্প। এক কথায় পাইলট প্রকল্প বলা যায়। এখান থেকে ফলাফল দেখে পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বড় প্রকল্প নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, এর আগে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ অনুযায়ী যমুনা নদী ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটারের মধ্যে সংকীর্ণ করতে কত বছর সময় লাগবে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে ওই এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি, কৃষি, মৎস্য সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে। তা ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংযোজন করতে হবে।
সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে যমুনা নদীর ডাউন স্ট্রিমের পরিবেশ ও যমুনা সেতু এবং পদ্মা সেতুসহ অন্যান্য স্থাপনার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে কি না সেটি জানতে চাওয়া হয়। এসব প্রশ্নের জবাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির আওতায় যমুনা নদী সংকোচনের কোনো পরিকল্পনা নেই।
এর আওতায় নদী ব্যবস্থাপনা মাস্টারপ্ল্যান তৈরির সংস্থান রাখা হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যানের সুপারিশের আলোকে ভবিষ্যৎ কৌশল, কর্মপরিকল্পনা এবং অবকাঠামো পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। আরও বলা হয়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আহাউডেক জিওগ্রাফিক লিমিটেড ও সরকারি সংস্থা সিইজিআইএস সম্ভাব্য সমীক্ষা করেছে।
তাদের দাখিল করা চূড়ান্ত সমীক্ষা প্রতিবেদনে কোথাও বিরূপ প্রভাবের কথা বলা হয়নি। এরপরও প্রকল্পের পরবর্তী পর্যায়ে আরও বিস্তারিত সমীক্ষা এবং পরিবেশ ও সামাজিক প্রভাব নিরূপণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পিইসি সভা সূত্র জানায়, সভায় বিভিন্ন ব্যয় প্রস্তাবে আপত্তি তোলে পরিকল্পনা কমিশন। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি থেকে গ্রোয়েন নির্মাণের স্থানে ড্রেজিং বাবদ ১২৬ কোটি টাকার প্রস্তাব বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভিলেজ প্ল্যাটফর্ম তৈরি এবং জিও ব্যাগ দিয়ে প্ল্যাটফর্মটি সুরক্ষা বাবদ ৫৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা বাদ দেওয়া হয়েছে। পরামর্শক খাতের ব্যয় কমিয়ে ১৩৯ কোটি টাকা বাদ দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতের ৩১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মোটর যান ও জলযান কেনা খাতে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা বাদ গেছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় দুজনের নদী ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স করার জন্য ব্যয় ধরা আছে ৮৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিদেশ সফর খাতে আলাদা আলাদা করে ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৬ লাখ টাকা। পিইসি সভায় পরামর্শক খাতে ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এর ফলে প্রস্তাবিত ২১৯ কোটি টাকা থেকে ১৩৯ কোটি টাকা কমানো হয়। এখন ১৭ খাতে পরামর্শক ব্যয়ের প্রস্তাব রয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: