ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


পাখির মৃত্যুর ফাঁদ তৈরী করেই চলছে শত পরিবারের জীবিকা


প্রকাশিত:
৫ অক্টোবর ২০২১ ০৬:০০

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ২০:৪৫

পাখির মৃত্যুর ফাঁদে ওদের জীবিকা। ওরা কাক ডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখি শিকারের ফাঁদ তৈরি করে। সারাটা দিন কেটে যায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে। সুতার তৈরি এ ফাঁদ দাঁড়িয়ে থেকে তৈরি করতে হয়। বসার কোন সুযোগ নেই।

সামনে শীতকাল। এ শীতটা চোরা শিকারীদের পাখি শিকারের মৌসুম। তাই খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শ্রীরামপুর, পারডুমরিয়া ও সোনাখালী গ্রামের পাখির মৃত্যুর ফাঁদ তৈরির কারিগররা।

শ্রীরামপুর গ্রামের ফাঁদ তৈরির কারিগর নয়ন তারা (ছদ্মনাম) বলেন, কি করব বলেন। কোন কাজ নেই। তাই বাধ্য হয়ে ফাঁদ তৈরির কাজ করি। এক কেজি লাইলন সুতার ফাঁদ তৈরি করে ৩০০ টাকা পাই। দিনে দেড় থেকে দুই কেজি সুতার ফাঁদ তৈরি করা যায়। বছরে শীত আসার আগে ৪ থেকে ৫ মাস পাখি শিকারের ফাঁদ তৈরি করি। তবে শীতের সময় চাহিদা বেশী থাকে। কারণ শীতের সময় অতিথি পাখি আসে। তাই শিকারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

তিনি জানান, বছরে তারা কমপক্ষে ৪০০ মন সুতার ফাঁদ তৈরি করে। এ ফাঁদ এ এলাকায় চলে না। ফাঁদ চলে যায় আগৈলঝাড়া, কোটালিপাড়া, টুঙ্গিপাড়া, মোকছেদপুর, কাশিয়ানী ও মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ফাঁদের ব্যবসায়ীরা তাদের সুতা কিনে দিয়ে যায়। সেই সুতা দিয়ে তারা ফাঁদ তৈরি করে। পরে ব্যবসায়ীরা তৈরীকরা ফাঁদ ওজন দিয়ে টাকা পরিশোধ করে নিয়ে যায়।

 

এ ব্যাপারে ডুমরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য ও শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মিন্টু সরদার এবং আরুলিয়া গ্রামের মানষ হালদার জানান, বছরের ৪ থেকে ৫ মাস ধরে এই তিন গ্রামের ৮০ থেকে ৯০ জন কারিগর পাখি শিকারের ফাঁদ তৈরি করেন। তাঁরা মৌসুমে জন প্রতি ৫ থেকে ৬ মন সুতার ফাঁদ তৈরি করেন। এদের অধিকাংশই নারী। এরা একেবারেই নিম্ন আয়ের মানুষ। এ আয়ের উপর তাঁদের সংসার চলে। অনেকের আবার ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া এ কাজের উপর নির্ভরশীল। তাই কাজটা খারাপ জেনেও কেউ তাঁদের কিছু বলে না।

চিতলমারী সদর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য অনির্বান মন্ডল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ওই তিন গ্রামের শতাধিক নারী পাখি শিকারের ফাঁদ তৈরি করছেন। তাঁরা খুব অসহায়। তাঁদের এ পথ থেকে ফেরাতে হলে অন্য কাজের মাধ্যমে আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে ওই শতাধিক পরিবারের মানুষ অনাহারে পড়বে।

চিতলমারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা চিকিৎসক মনোহর চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘আমি নিজেও দেখেছি ওই নারীরা ফাঁদ তৈরি করছেন। কিন্তু এটা বন্ধে আমার কোন ক্ষমতা বা দায়িত্ব নেই। যাদের দায়িত্ব তাঁরা নজর দিলেই এটি বন্ধ হতে পারে।’


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top