ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

পরিবেশ ভাবনার অতীত ও বর্তমান


প্রকাশিত:
১৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:০০

আপডেট:
১২ মার্চ ২০২১ ০৪:৩৬

 

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন ২০১০ সালে জেনেভায় এক আন্তর্জাতিক পরিবেশ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে যদি তৃতীয় মহাযুদ্ধ হয় তবে তা হবে পানি নিয়ে’। আরেকটি আগাম মন্তব্য করেছিলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে পৃথিবীতে পরিবেশ আন্দোলনের মূল নেতা হবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ মূলত পানি নিয়ে বিরোধ আজকের ব্যাপার নয়। বস্তুত মানুষে মানুষে যত দ্বন্দ্ব ঘটে থাকে পানি তার এক প্রাচীনতম কারণ। ইংরেজী রাইভাল (প্রতিদ্বন্দ্বী ) শব্দের উৎপত্তি লাতিন ‘ রিভেলিস ’ শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘একই নদীর পানি যারা ব্যবহার করে’। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় নদীর পানি সেচের জন্যে টেনে নিয়ে যাওয়া শুরু হওয়ার পরে ক্রমশ সেই পানির অনেক রিভেলিস জোটে। পানির শান্তিপূর্ণ বিলিবন্দোবস্তের জন্য নিয়ম-কানুনের দরকার হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টাদশ শতকে সুমের রাজা হামুরাবি নিউনিফর্ম হরফে যেসব আইন লিপিবদ্ধ করে গেছেন তাতে সেচের পানি চুরির জন্যে শাস্তির বিধান লেখা আছে। অনুমান করা যায়, এমন অপরাধ কম হতো না। তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এরকম আগাম মন্তব্য কেন করেছিলেন। নিশ্চিত করে বলা যায়, শেখ হাসিনার ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের সরকারের জলবায়ু নিয়ে নানা পদক্ষেপ তার নজরে এসেছিল।

 

বিশে^র পরিবেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে জাতিসংঘ ১৯৭২ সালের ৫ জুন ‘বিশ^ পরিবেশ দিবস’ পালন করেছিল। কিন্তু তারও প্রায় ৫০ বছর আগে বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে যান্ত্রিক সভ্যতার বিষবাষ্পে পরিবেশ যে দূষিত হবে সেটা উপলব্ধি করেছিলেনÑ ‘কেবল পাকা রাস্তাই যে মানুষের পক্ষে আবশ্যক তাহা নয়, প্রকৃতির বুকের ওপর পাথর ভাঙ্গিয়া আগাগোড়া সমস্তটাই যদি পাকা রাস্তা করা যায় কাঁচা কিছুই থাকে না তবে সভ্যতার অতিশয় বৃদ্ধি হয় সন্দেহ নাই কিন্তু সেই অতি বৃদ্ধিতেই তাহার বিনাশ।’ ঋষি কবি রবীন্দ্রনাথ যা বিশ^াস করতেন তাই বলতেন কিন্তু এখনকার মানুষ যা বিশ^াস করেন তা বলেন না, যা বলেন তা পালন করেন না। এবার দেখা যাক নোবেলজয়ী রাজনীতিবিদ আল গোরের হিসাব। ক্লিনটন আমলে আমেরিকার উপরাষ্ট্রপতি, পরে রাষ্ট্রপতি পদের প্রতিযোগিতায় পরাজিত। বিশ^ উষ্ণায়ন নিয়ে উনি অনেক ভাষণ দিয়েছেন ও একটি চলচ্চিত্র বানিয়েছেন, যার নাম ‘অপ্রিয় সত্য’ (ইনকনভিনিয়েন্ট ট্রুথ)। আল গোরের বাড়িতে আছে ২০টি বিশাল ঘর, ৯টি বাথরুম। গড় আমেরিকান বছরে বিদ্যুৎ খরচ করেন ১০,৬০০ কিলোওয়াট-ঘণ্টা, সেখানে আল গোরের খরচ ২২১,০০০ কিলোওয়াট-ঘণ্টা, ২০ গুণ বেশি। এ থেকে আল গোরের কার্বন পদাঙ্কের মাপের একটা ধারণা করা যেতে পারে, যা একটি গরিব বাঙালীর ৪৫০ গুণ। এই আল গোরই সারা পৃথিবীকে কার্বন ব্যবহার কমানোর জন্য নোবেল পুরস্কার পেলেন। সত্যজিৎ রায়ের অসম্ভব এক জনপ্রিয় সিনেমার নাম ‘হীরক রাজার দেশে’। সেখানে বলা হয়েছে, ‘যে যত পড়ে ততবেশী জানে, তত কম মানে’। একদিক দিয়ে বিশ^ উষ্ণায়ন কমানোর ব্যাপারটা খুব কঠিন নয়। যদি উন্নত দেশের লোকেরা এত বড়বড় বাড়িতে না থাকেন, শীতে ঘর কম গরম আর গ্রীষ্মে কম ঠা-া রাখেন, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমে যায়, একটু কম প্লেন চড়েন, সব কিছু ঝকঝকে রাখার জন্য হাজারো খরচা না করেনÑ এরকমভাবে জীবনযাত্রা একটু সরল ও একটু কষ্টকর করে তুললে কার্বন খরচ কমে যাবে অনেক। আমেরিকার হাইওয়ের পাশে ঘাস কেটে লন করে রাখা বন্ধ করলেই বেঁচে যাবে অনেক জ¦ালানি অথবা জামাকাপড় ড্রাইয়ারে না দিয়ে সূর্যালোকে শুকালে বাড়ির খরচ বেঁচে যাবে প্রায় ১০ শতাংশ। এসব কী করা যাবে ? আর উন্নত দেশের মানুষ যদি মাংস খাওয়া ছেড়ে দেন তাহলে তো কথাই নেই। পশুপালন ও বিশ^ উষ্ণায়ন নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের ফুড এ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশেন (ফাও) একটি ভাল প্রকাশনা করেছে।

 

তাতে জানাচ্ছে যে, পশু পালন থেকে নির্গত মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমন, বন কেটে চারণ ভূমি বানানো বা পশুখাদ্যের জন্য চাষের জমি বানানো ইত্যাদি বিশ^ উষ্ণায়নের ১৮ শতাংশ ঘটায়। একটি পশুকে বড় করে তুলতে যে পরিমাণ শস্য খাওয়াতে হয় তার দশভাগের এক ভাগ শস্য দিয়েই একজন মানুষ ওই পশুর সমপরিমাণ মাংসের খাদ্যগুণ পেতে পারে। সুতরাং উন্নত দেশের মানুষ যদি নিরামিশাষী হয়ে যান তাহলে বিশ^ উষ্ণায়নের পরিমাণ অনেক কমবে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর উষ্ণায়ন রোধের কর্মসূচীতে তাদের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান কমানোর কথা নেই। এভাবেই আল গোরের দুনিয়া বিজয়ের শুরু।

 

॥ দুই ॥

 

প্রাচীনকাল থেকেই মানবসভ্যতাকে গড়ে তুলতে নদীর পানির গুরুত্ব অপরিসীম। স্বভাবতই এই নদীর পানিকে সব চেয়ে উপযুক্ত উপায়ে ব্যবহারের প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে বাঁধ নির্মাণ করে, সেচ ব্যবস্থা চালু করে। বন্যা থেকে অব্যাহতি পেতে এবং একই সঙ্গে কৃষির প্রয়োজনে পানিকে সুনিশ্চিত করতে বাঁধ নির্মাণ এবং সেচ ব্যবস্থার প্রসার প্রাচীন সভ্যতার অঙ্গ ছিল। বর্তমানে বহুমাত্রিক প্রয়োজনে বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। জলাধার, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, সেচ ব্যবস্থা, নদীর নাব্য রক্ষা ইত্যাদি বহুবিধ পরিকল্পনা বড় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে করা হয়। জলাধারগুলো উচ্চতর অববাহিকায় হওয়ার ফলে বনাঞ্চলের বড় অংশ ধ্বংস হয়। সেই এলাকার জনজীবন এবং পশুপাখি উচ্ছেদের সম্মুখীন হয়। বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যেরও কিছু পরিবর্তন ঘটে। বৃষ্টিপাতের মাত্রা কমে। ভূমি ক্ষয়ও বাড়তে থাকে। ফলে নদীর গতিরও কিছুটা পরিবর্তন হয়।

 

বর্তমান বিশে^ যে ক্ষতিকর পদার্থগুলো তৈরি হয়, শুধু শূন্য-বৃদ্ধির পরিকল্পনা, তার উৎপাদন ও ফলাফল থেকে দুনিয়াকে মুক্ত করতে পারবে না। যেমন পেটোকেমিক্যাল শিল্প। পুঁজিবাদী কাঠামোয় যেখানে লাভই হলো মূল প্রেরণা, সেখানে এ লাভজনক শিল্পে উৎপাদন বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায়, সাবানে যে লাভ হয় তার চেয়ে দ্বিগুণ লাভ হয় ডিটারজেন্ট শিল্পে; ১৯৬৯ সালে প্লাস্টিক এবং বেসিন উৎপাদনে বিক্রির ওপর লাভ ছিল ২১.৪%; যেখানে এগুলো যার পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে, সেই কাঠ ও স্টিল উৎপাদনের লাভের হার ছিল যথাক্রমে ১৫.৪% ও ১২.৫%। পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে উৎপাদনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং তার অবশেষের মধ্য দিয়ে পরিবেশ ক্রমাগত বিষাক্ত হচ্ছে জেনেও পুঁজিবাদের পক্ষে এ লাভজনক শিল্প পরিত্যাগ করা কি করে সম্ভব? দ্বিতীয়ত, আধুনিক বিশ^ যে মারণাস্ত্র প্রতিযোগিতায় মত্ত, তাতে যে পরিমাণ নিউক্লিয়ার ও অন্য যুদ্ধাস্ত্র মজুদ আছে ও উৎপাদন হচ্ছে, এই পুঁজিবাদী কাঠামো বজায় রেখেই তার দূষণীয় প্রভাব থেকে বর্তমান বিশ^কে মুক্ত করা সম্ভব অতি বড় আশাবাদীও এ কথা কল্পনা করতে পারে না।

 

॥ তিন ॥

 

বায়ু দূষণের সবচেয়ে বড় উৎপাদন হলো কার্বন মনোক্সাইড, যার আবার প্রধান উৎস হলো মোটরগাড়ি। যখন পরিবেশবাদীরা কার্বন মনোক্সাইড নির্গমনের কঠোর নিয়ন্ত্রণের দাবি করে (অনেক সময় বড় বড় গাড়ির কোম্পানিগুলো সেই মান অর্জনের কথা ঘোষণা করে), তখন তারা মোটরগাড়ির অপ্রয়োজনীয় সংখ্যা বৃদ্ধি যে অধিকতর বায়ু দূষণের জন্ম দিচ্ছে এবং পুরনো গাড়ির অবশেষ যে ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি করছে, তার প্রতি প্রয়োজনীয় দৃষ্টিপাত করেন না (শুধু আমেরিকাতে প্রতিবছর ৭০ লাখ গাড়ি ফেলে দেয়া হয়)। কাগজ শিল্প যে উপজাত ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ ফেলে দেয় তা কমানোর দিকটা দেখলেও, শুধু বিজ্ঞাপনের জন্য যে কাগজ উৎপাদন ও ব্যবহারের পরিমাণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তা বন্ধের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ তাদের পরিকল্পনায় আসে না। শক্তি সমস্যা আলোচনা করার সময় ধনী দেশগুলোর শক্তি অপচয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে তারা ব্যর্থ হন; শুধু আমেরিকাতে যেখানে পৃথিবীর মাত্র ৬% মানুষ বাস করে, সেখানে পৃথিবীর ৩৩% শক্তি কেন খরচ হয় সে প্রশ্নের গভীরে তারা প্রবেশ করেন না। আমেরিকার পরিবেশ আন্দোলন আর তৃতীয় বিশে^র পরিবেশ আন্দোলন এক রকমের নয় । বরঞ্চ অনুন্নত দেশগুলোর পরিবেশবাদীরা অনেক বেশি আন্তরিক। পৃথিবীতে অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে। ভাল কাজের জন্যে শুরু করলেও পরবর্তীতে খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। ভাল মানুষী চেহারাটা ব্যবহার করে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে কাজ করার হাজার হাজার উদাহরণ আছে। কিন্তু উল্টোটার উদাহরণ খুব কম। ভারতে বনের গাছ কাটার অধিকার নিয়ে আন্দোলনে নেমে এক পর্যায়ে পরিবেশবাদী আন্দোলনের সূচনা করেছেন। পাহাড়ে অস্পৃশ্যতাবিরোধী আন্দোলন, মদ্যপানবিরোধী আন্দোলনে তিনি নেতৃত্বে দিয়েছেন, সমবায় সংস্থা গড়েছেন। গান্ধীবাদী ধারায় হিমালয়ে আধুনিক উন্নয়নের বিরোধী ছিলেন সুন্দরলাল। এ প্রসঙ্গে দুই গান্ধীবাদী ব্রিটিশ মহিলা যাদের ভারতীয় নামকরণ হয় মীরা বেহন ও সরলা বেহন, উল্লেখ জরুরী। হিমালয়ে পরিবেশবাদী চিন্তার এরা দুজন ছিলেন পুরোধা। সুন্দরলাল এদের সঙ্গে পরিচিত ও প্রভাবিত ছিলেন। দীর্ঘদিন হিমালয়ের গ্রামে সমাজসেবা করে মীরা ১৯৫৯ সালে ইউরোপে চলে গেলেও সরলা বেহেন হিমালয়ের গ্রামেই সারাজীবন কাটিয়ে গেছেন। চিপকো আন্দোলন শুরু হলে সুন্দরলালও তেহরি গাড়োয়াল অঞ্চলে আন্দোলন শুরু করেন। সুন্দরলাল চিপকোর স্থানীয় মানুষের জঙ্গলের ব্যবহার ও কর্মসংস্থানের অধিকারকে হিমালয়ের পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে রূপান্তরিত করলেন। চ-ীপ্রসাদ ভাটের আন্দোলন যখন উত্তরপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা-সংঘর্ষের মাধ্যমে জঙ্গলের ব্যবহারের ও কর্মসংস্থানের অধিকার সংক্রান্ত কিছু দাবি দাওয়ার লড়াইয়ে জয় অর্জন করছে তখন সুন্দরলাল বহুগুণা পাহাড়ের সীমানা ছাড়িয়ে আন্দোলনকে পৌঁছে দিতে পারলেন দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে, কংগ্রেস দলের জাতীয় নেতৃত্বের কাছে। পাহাড়ে কে গাছ কাটবে, কার কর্মসংস্থান হবে এ ধরনের মামুলি আন্দোলনের থেকে দেবতাত্মা হিমালয় বাঁচানোর পরিবেশবাদী আন্দোলন শহরের উচ্চবর্গের অধ্যাপক-গবেষক, শৌখিন পরিবেশপ্রেমী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কাছে গ্রহণীয় হলো। সুন্দরলাল বহুগুণা হয়ে উঠলেন চিপকো আন্দোলনে জাতীয় ও পরে আন্তর্জাতিক মুখ। সুন্দরলালের চিপকো আন্দোলনের স্লোগান হলোÑঅরণ্য কি দেয়? মাটি, জল আর নির্মল বাতাস। ১৯৭৯-র ৯ জানুয়ারি সুন্দরলাল গাছ কাটার বিরুদ্ধে অনশন শুরু করেন ও গেফতার হন, ৩১ জানুয়ারি মুক্তি পান। ১৯৮১-র এপ্রিল মাসে সুন্দরলাল বহুগুণা সমগ্র হিমালয়ের ১০০০ মিটারের ওপরে সম্পূর্ণ গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে অনশন শুরু করেন। এবার বিষয়টি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নজরে আসে, সরকারী কমিটি গঠন হয় ও এরপর হিমালয়ের ১০০০ মিটারের ওপরে সম্পূর্ণ গাছ কাটা আইনত বন্ধ করে দেয়া হয়। চিপকো আন্দোলন জয়ী হলো। সুন্দরলাল চিপকোর স্থানীয় মানুষের জঙ্গলের ব্যবহার ও কর্মসংস্থানের অধিকারকে হিমালয়ের পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে রূপান্তরিত করলেন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পদক ‘চ্যাম্পিয়নস্ অব দ্য আর্থ’ সম্মানে ভূষিত হন। পদক দেয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, শেখ হাসিনার সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রতিবছর বাজেটে ৬ থেকে ৭ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করে থাকে। তার সরকারের সময় দেশের উপকূলের বনাঞ্চলের সুরক্ষা ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জলবায়ু সুরক্ষা ৩০০ মিলিয়ন ডলারের নিজস্ব তহবিল গঠন করেছে ।

 

॥ চার ॥

 

বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবেশ ভাবনা শিশুদের কাছে আরও সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে ‘সহজ পাঠ’ এর বিভিন্ন ছড়াতে। বৈশাখ মাসে নদীর হাঁটুজল, নদী দিয়ে গরুর গাড়ির পার হওয়া, নদীর পাড়ে সাদা ফুলের কাশবন, শালিকের ঝাঁক, রাতে শিয়ালের ডাক, গামছায় জল ভরে বাচ্চাদের গায়ে ঢালা, অঁাঁচল দিয়ে ছোট মাছ ধরা, বধূদের বালি দিয়ে থালাঘটি মাজা কিংবা কাপড় কঁাঁচা প্রভৃতি যেন প্রাণবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে তার কবিতায়। বৈশাখ মাসে যে নদীতে হাঁটুজল থাকে বর্ষাকালে আষাঢ় মাসে সেই নদীতেই বালি দেখা যায় না, দেখা যায় ঘোলা জলের মহাবেগের স্রোত, যেন বরষার উৎসব। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর পরিবেশ আজ বিপন্ন। নির্মম পরিবেশে আজ বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, মাটি দূষণ, যান্ত্রিক সভ্যতার বিষবাষ্প, গ্রীন হাউস এফেক্টের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অরণ্যের অবক্ষয় , বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি ইত্যাদি সমস্যা প্রকটরূপে দেখা দিয়েছে। যান্ত্রিক সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ দূষণ সমান তালে তাল মিলিয়ে চলছে। তাই আজ আমরা পরিবেশ দূষণ নিয়ে হইচই করছি। পরিবেশ দূষণ ভয়াবহ বলে যখন উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছি, তখন বৃক্ষরোপণ প্রসঙ্গ আসছে। রবীন্দ্রনাথ আজ থেকে ৮৫ বছর পূর্বেই ১৯২৮ সালে বৃক্ষরোপণ উৎসব প্রবর্তন করেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের দীর্ঘ ২১ বছর পর রাষ্ট্র্রীয় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃক্ষরোপণে নাগরিক দায়িত্ববোধের কথা বলেছিলেন এবং প্রত্যেক নাগরিকের কাছে সে বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই প্রতিবছর বৃক্ষমেলা হচ্ছে।

 

সূত্রঃ জনকণ্ঠ

 


বিষয়: পরিবেশ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top